1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৫:২৭ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

চীনের উত্থান কি ঔপনিবেশিক আধিপত্যের কফিনে শেষ পেরেক? : ড. প্রণব কুমার পান্ডে

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

পশ্চিমা দেশগুলো ঐতিহাসিকভাবে সব সময় বিশ্বব্যাপী ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের আলোচনা প্রভাবিত করে। ঔপনিবেশিক আমল থেকে বিশ্বায়নের যুগ পর্যন্ত শতাব্দী ধরে পশ্চিমারা বিশ্বব্যাপী আধিপত্য ও কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে। বৈশ্বিক শক্তিতে চীনের উল্লেখযোগ্য আবির্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে, একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- চীনের উত্থান কি পশ্চিমের সা¤্রাজ্যবাদী আধিপত্যের সমাপ্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে?
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পশ্চিমের ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো অর্থনৈতিক আধিপত্য, আঞ্চলিক সম্প্রসারণ এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তারের উচ্চাকাক্সক্ষা দ্বারা পরিচালিত হয়। এই সময়টি স¤পদের ব্যবহার, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর দমন এবং পশ্চিমা মান ও মতাদর্শ আরোপের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। এশিয়া, আফ্রিকা এবং আমেরিকা অঞ্চলগুলো ছিল পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদ দ্বারা সর্বাধিক প্রভাবিত অঞ্চল, যেখানে ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে সেই অঞ্চলের জনগণ ক্রমাগতভাবে শোষণ ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। তবে, একবিংশ শতাব্দীতে বৈশ্বিক ভূরাজনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। চীন, অনেক বছর আগে বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও, সময়ের সাথে সাথে বিশ্বব্যাপী শক্তি প্রদর্শন করতে এবং বৈশ্বিক কাঠামো পরিবর্তন করতে কাজ করছে। চীন তার দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে পশ্চিমা আধিপত্যের এক ভয়ঙ্কর শত্রু হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।
চীনের অর্থনৈতিক শক্তি তার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) মতো প্রচেষ্টার মাধ্যমে চীন এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপে উল্লেখযোগ্য পরিকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে। চীন বন্দর, রেলপথ এবং টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কে বিনিয়োগের মাধ্যমে তার অর্থনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি করছে এবং অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে। বিশ্বব্যাপী চীনের এই ভূমিকা ঔপনিবেশিক শক্তিগুলের দ্বারা নিযুক্ত শোষণমূলক অনুশীলনের সাথে বৈপরীত্য ঘটাচ্ছে যা পশ্চিমাদের আধিপত্যকে হুমকির সম্মুখীন করেছে।
দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে পার¯পরিক সহযোগিতা এবং ঐক্যের প্রতি চীনের মনোযোগ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রতি পশ্চিমাদের কখনও কখনও অবজ্ঞাপূর্ণ মনোভাবের একটি ইতিবাচক বৈপরীত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। চীন পার¯পরিক সম্মান এবং কোনও দেশের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপ না করা কেন্দ্রিক একটি বহু-মেরু বিশ্ব ব্যবস্থার প্রচার করার মাধ্যমে বিশ্ব প্রশাসনে পশ্চিমা আধিপত্যের বিরোধিতা করে আসছে। এটি একতরফা আধিপত্য থেকে সরে এসে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায্য বৈশ্বিক ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে গিয়ে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতার পক্ষে কাজ করছে।
চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বৈশ্বিক শক্তির গতিশীলতা পরিবর্তন করছে যা তার অর্থনৈতিক শক্তি বাড়িয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং মহাকাশ অনুসন্ধানের মতো শাখায় চীন শীর্ষস্থানীয় হয়ে উঠছে। চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি কেবল তাকে প্রতিযোগিতায় শীর্ষে রাখছে তা নয়, বরং প্রযুক্তিগত আধিপত্যের প্রতি পশ্চিমের বিশ্বাসও চ্যালেঞ্জ করছে।
কূটনীতি ও বহুপাক্ষিকতার প্রতি চীনের নিষ্ঠা বিশ্ব অঙ্গনে তার প্রভাব বাড়িয়ে তুলেছে। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এবং সাংহাই কো-অপারেটিভ অর্গানাইজেশন (এসসিও) বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের মধ্যে আরও সহযোগিতা এবং সংহতি বাড়ানোর জন্য কাজ করছে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন, দারিদ্র্য হ্রাস এবং জনস্বাস্থ্যে উন্নতির বিষয়গুলো সমর্থন করে চীন নিজেকে একটি দায়িত্বশীল বৈশ্বিক চরিত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করছে। চীনের দৃষ্টিভঙ্গি পশ্চিমের স্বাধীন কার্যকলাপ এবং সামরিক হস্তক্ষেপের ইতিহাসের বিপরীত। এটা চীনের শক্তি এবং আন্তর্জাতিক সুনাম বাড়িয়েছে।
চীনের দ্রুত সম্প্রসারণ ¯পষ্ট হওয়ার মাধ্যমে পশ্চিমের ঔপনিবেশিক আধিপত্যের সমাপ্তি দ্রুততর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিদ্যমান ক্ষমতার কাঠামো ব্যাহত করতে পারে। বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক বৈষম্য, সাংস্কৃতিক আধিপত্য এবং ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব পশ্চিমা আধিপত্যের স্থায়ী সমাপ্তির ¯পষ্ট ইঙ্গিত বহন করছে। আন্তর্জাতিক বিষয়ে চীনের আচরণ বিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্ব, মানবাধিকার এবং পরিবেশগত টেকসই আদর্শের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পশ্চিমা গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো ভিন্নমত দমন, দক্ষিণ চীন সাগরে জোরপূর্বক আঞ্চলিক দাবি এবং পরিবেশগত নীতির জন্য চীনা সরকারের সমালোচনা করেছে।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করার জন্য প্রশংসা পেলেও ঋণ-ফাঁদ কূটনীতি এবং স্বচ্ছতার অভাবের জন্য সমালোচিত হচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন যে, চীনের পরিকাঠামো প্রকল্পগুলো অংশীদার দেশগুলোর প্রকৃত চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বিধায় ঋণ গ্রহিতা দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
জটিল ভূরাজনৈতিক দৃশ্যপটের কারণে বৈশ্বিক শক্তির গতিশীলতার ভবিষ্যৎ গতিপথ অনিশ্চিত। চীনের উত্থান পশ্চিমা আধিপত্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিলেও এটা স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে উপনিবেশবাদের প্রভাব হঠাৎ করে নির্মূল করা যায় না। পশ্চিমা ঔপনিবেশিক আধিপত্য নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, যা ন্যায়সঙ্গত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বৈশ্বিক ব্যবস্থার জন্য নতুন বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
চীনের উত্থান পশ্চিমের ঔপনিবেশিক আধিপত্যের ওপর বহুমুখী প্রভাব ফেলেছে, যা একটি সূক্ষ্ম সমস্যা হয়ে উঠেছে। ফলে, এই বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করতে হলে ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার, ভূরাজনৈতিক প্রবণতা এবং বৈশ্বিক শক্তি স¤পর্কের গভীর বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিবর্তিত পরিবেশ কাঠামো পরিচালনা করার জন্য পূর্ব বনাম পশ্চিমের মৌলিক দ্বন্দ্বের বাইরে গিয়ে সহযোগিতা এবং যোগাযোগের বিষয়গুলো প্রচার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবর্তিত পরিবেশে অগ্রগতির সাথে সাথে একটি সুন্দর এবং আরও সমৃদ্ধ বিশ্বের একটি সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সব রাষ্ট্রকে কাজ করে যেতে হবে। চীনের উত্থান বিশ্ব অঙ্গনে একটি বড় প্রভাব, যা পশ্চিমের সা¤্রাজ্যবাদী আধিপত্যের একটি শক্তিশালী বিকল্প শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। চীন বর্তমান শক্তির গতিশীলতা চ্যালেঞ্জ করছে এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং কূটনৈতিক অংশীদারিত্বের ওপর জোর দিয়ে আরও ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বৈশ্বিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। ভবিষ্যতই বলে দেবে সামনের দিনগুলোতে কোন শক্তি বিশ্ব শাসন করবে।
লেখক: অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com