1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ভারতের ওপর বাইডেনের বাজি ধরার মাজেজাটা কী?

  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩

অরবিন্দ সুব্রামানিয়াম
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অভূতপূর্ব দহরম-মহরম দেখা যাচ্ছে। দুই দেশের অভাবিত এ ঘনিষ্ঠতা বিভ্রম-জাগানিয়া। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের আয়োজন কিংবা মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে মোদিকে ভাষণ দিতে মার্কিন স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থির আমন্ত্রণের পর যে কেউ ভাবতেই পারেন – কিসের আশায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে এত খাতির করছে।
রাষ্ট্রীয় ভোজ না হয় প্রতীকী, বুঝলাম। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র একই সঙ্গে কোনো সামরিক চুক্তি ছাড়াই ভারতকে সামরিক প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে; নিজ দেশের করপোরেশনগুলোকে ভারতে বিনিয়োগে উৎসাহ দিচ্ছে; ভারতীয়দের জন্য মার্কিন ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করেছে। সর্বোপরি, গণতান্ত্রিক পশ্চাৎপসরণের জন্য ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র আর আগের মতো সমালোচনার তোপের মুখে রাখছে না। এ সবকিছু দেখে মনে হতেই পারে যুক্তরাষ্ট্র একতরফা ভারতের প্রেমে পড়েছে। নিমরাজি ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এ আধাখেঁচড়া একপক্ষীয় জোটের পক্ষে কৌশলগত যুক্তি হচ্ছে যে বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রশমন করতে ভারতের সঙ্গে সুস¤পর্ক বজায় রাখা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সাবেক মার্কিন কূটনীতিক অ্যাশলে জে টেলিসের অভিমত, ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এত বেশি ভরসা করা ভুল হচ্ছে, কেননা চীনের বিরুদ্ধে ভারত কখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট বেঁধে যুদ্ধে জড়াবে না, যদি না ভারতের নিজস্ব নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। তাইওয়ান নিয়ে চীন-মার্কিন সম্ভাব্য সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের মাত্রাতিরিক্ত সহবত সত্ত্বেও ভারত নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখবে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানও এটা স্বীকার করেছেন।
অন্যদিকে অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভারত বিশেষজ্ঞ প্রতাপ ভানু মেহেতা মনে করেন যে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ক্রমহ্রাসমান সেহেতু ভারতের বন্ধুত্ব যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরোত্তর বেশি প্রয়োজন। তাছাড়া স্বৈরতন্ত্রের নব্য অক্ষম-লে চীন, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে অধুনা যুক্ত হয়েছে সৌদি আরব ও তুরস্কের মতো দেশগুলো।
নতুন এ ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, নতুবা এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র একঘরে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুধু শত্রুর সংখ্যাই বাড়ছে না, তার মিত্রদের নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র শঙ্কিত। কেননা চীনের ব্যাপারে ইউরোপের কোনো দ্ব্যর্থহীন অনড় অবস্থান নেই। জাপান ও কোরিয়া নির্ভরযোগ্য মিত্র হলেও তাদের জনসংখ্যার বয়স বর্ধমান ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আশানুরূপ নয়।
সবকিছু সত্ত্বেও স্বৈরতন্ত্রের অক্ষম-লে ভারতকে যোগদান করা থেকে বিরত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের এত কিছু করার প্রয়োজন ছিল কিনা তা বিবেচনার দাবি রাখে। চীন তো ভারতের বৈরীভাবাপন্ন প্রতিবেশী। অন্যদিকে সৌদি আরব উগ্রবাদী ইসলামপন্থীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত। ভারতের প্রধান সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী হলেও রাশিয়া এখন ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে। তাই এসব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব ভারতের আদৌ কাম্য নয়। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বৃহদাকারের ভারতীয় অভিবাসীদের কারণে এবং মৌল অর্থনৈতিক ও সামরিক স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত উপেক্ষা করতে পারবে না।
এ অর্থে বলা যায় যে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের এত খাতির করার মানে হয় না। কারণ যুক্তরাষ্ট্র চাইলেও ভারত চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সংঘাতে জড়াবে না কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শত্রুর সঙ্গে বন্ধুত্বে জড়াবে না। তাই প্রশ্ন জাগে, মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিনির্ধারকদের অভিসন্ধিটা কী?
সামরিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির হিসাব-নিকাশ করলে এর একটা সম্ভাব্য ব্যাখ্যা পাওয়া যেতে পারে। মার্কিন রাজনীতিতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা এ ব্যাপারে একমত যে চীন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এমন এক অস্তিত্বের সংকট যার কোনো প্রতিকার নেই পাল্টা কোনো আঞ্চলিক শক্তি দাঁড় করিয়ে প্রতিরোধ ছাড়া। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২৬ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার হবে; অন্যদিকে চীনের জিডিপি হবে ১৯ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার (বাজার বিনিময় হার অনুসারে)। কিন্তু আগামী দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির সঙ্গে চীনের জিডিপির এ দূরত্ব ছোট হয়ে আসবে।
ভারতের প্রবৃদ্ধি নিয়ে অতি উচ্ছ্বাস-উচ্চাশা সত্ত্বেও চীনের অর্থনৈতিক কিংবা আর্থিক সক্ষমতার সমকক্ষতা অর্জন করতে অনেক দূর যেতে হবে। চীনের জিডিপি বাজারের বিনিময় হারে ভারতের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি এবং ক্রয়ক্ষমতা সমতা হারে প্রায় ২ দশমিক ৭ গুণ বেশি। তাছাড়া চীনের সামরিক ব্যয় তিন-চার গুণ বেশি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ছয়-সাত গুণ বেশি। ভারতের তুলনায় চীনের মোট বাণিজ্যের পরিমাণও অনুরূপ বেশি এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন ঋণদানেও চীন বহুগুণ এগিয়ে গেছে।
এমন অপ্রতিরোধ্য অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার কারণেই চীন হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে ভারতের ভূ-সীমানা দখলের সাহস পায়। তাই প্রায়ই চীনের আধিপত্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভারতের অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়। এতে স্পষ্ট যে বর্তমান ভূরাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পক্ষে চীনের পাল্টা প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়ানোর জো নেই।
অবশ্য আশু কোনো লাভের আশায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর বাজি ধরছে না। বরং যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে যে ভবিষ্যতে চীন ও ভারতের ভাগ্যে পরিবর্তন আসতে পারে। অতি পুরনো কাঠামোগত ও জনসংখ্যাগত চ্যালেঞ্জের কারণে তথা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বেসরকারি খাতে ক্রমবর্ধমান দমনমূলক নীতির কারণে দেশটির দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে যেতে পারে। একই সময়ে ভারতের প্রবৃদ্ধি ফি বছর ৫-৬ শতাংশ হারে বাড়তে থাকবে বলে আশা করা যায় যদি ভারত অবকাঠামোগত উন্নয়ন অব্যাহত রাখে এবং দূরদর্শী ও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন ও অনুসরণ করে।
তবুও সামরিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার বিচারে চীনের সঙ্গে ভারতের ব্যবধান স¤পূর্ণরূপে দূর হবে না। কিন্তু ভবিষ্যতে তাদের ক্ষমতার মধ্যবর্তী দূরত্ব এতটুকু হ্রাস পেতে পারে যাতে হয়তো চীন নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় ভারতকে ধর্তব্যে নিতে বাধ্য হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আগামী দুই দশকে চীনের জিডিপির সঙ্গে ভারতের জিডিপির অনুপাত ৫ থেকে ২ দশমিক ৫-এ নেমে আসে, তখন ভারত চীনকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কিংবা সীমান্তে টেক্কা দেয়ার সাহস করতে পারবে। তখন চীনের নীতিনির্ধারকরা ভারতকে ধর্তব্যে নিতে বাধ্য থাকবেন।
সবচেয়ে বড় কথা, ভবিষ্যৎ একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর কোনো চূড়ান্ত পরিসমাপ্তি নেই। যদি চীনের প্রবৃদ্ধি কমে যায় আর ভারতের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক টেকসই হয়, ব্যবসা-বাণিজ্যে কিংবা সম্ভাব্য বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের একটি আকর্ষণীয় মিত্র হয়ে ওঠার সুযোগ রাখে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভারত চীনের সঙ্গে পাল্লা দেয়ার মতো সামরিক কিংবা আর্থ-রাজনৈতিক সক্ষমতা অর্জন থেকে দূরে থাকলেও কৌশলগত হিসাব-নিকাশ থেকেই ভারত বর্তমানে গুরুত্ব বহন করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে।
এটা সত্য যে ভারত আসলে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবে কিনা তা নির্ভর করছে ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের ওপর, মার্কিন নীতিনির্ধারকদের ওপর নয়। কিন্তু ভবিষ্যতের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ স¤পর্ক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে চীনের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি নি¤œগামী হওয়ায় দূরপ্রাচ্যের এ দেশ দিনকে দিন আরো বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে। সে পরিপ্রেক্ষিতে চীনের বাজার থেকে মার্কিন বিনিয়োগ সরিয়ে নেয়ার জন্য মার্কিন সরকারের প্ররোচনা থাকবে। সরিয়ে নেয়া মার্কিন পুঁজির একটা অংশ যদি ভারতে আসে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। যুক্তরাষ্ট্র চাইলে ভারতের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করতে পারে। এসবের মধ্য দিয়ে বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র যে বার্তা দিচ্ছে তা হলো, ভারত আমাদের মিত্রদেরই একজন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এ উচ্ছ্বসিত বন্ধুত্বে ভারত ততটা উৎসাহী নয়, কিন্তু বর্তমান ভূরাজনৈতিক আলোচনায় ভারতের এ নিমরাজি মনোভাব বিবেচ্য নয়।
মোদ্দা কথা, ভারতকে নিয়ে বাইডেনের ধরা বাজির অভিপ্রায় চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য কোনো যুদ্ধে ভারতের সামরিক সহায়তা নিশ্চিত করা নয় কিংবা ভারতকে স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর অক্ষম-লে যোগদান করা থেকে বিরত রাখাও নয়। বরং বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে ভারত ও চীনের মধ্যে বিদ্যমান দূরত্বকে আপাতদৃষ্টিতে কমিয়ে নিয়ে আসার জন্য অনেক হিসাব-নিকাশের পর যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর এ বাজি ধরেছে। সামরিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার মাপকাঠিতে ভারত ও চীনের মধ্যে ব্যবধান যত কমবে, চীনের আধিপত্যে লাগাম টানা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তত সহজ হবে। [স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট]
অরবিন্দ সুব্রামানিয়াম: সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের ডিস্টিংগুইশড ফেলো, বর্তমানে ভারতের তামিলনাড়– সরকারের বিদ্যুৎ খাত সংস্কার এবং সবুজ রূপান্তরবিষয়ক পরামর্শদাতা, ভাষান্তর: জামান মঞ্জু

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com