বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচন মানে বখত পরিবার বনাম হাছন রাজা পরিবারের মধ্যেকার তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা – বিগত দুই যুগের নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণে এমন চিত্রই ফুটে ওঠে। এই সময়টাতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে পরিবার দুটির ছয় জন প্রার্থী ভিন্ন ভিন্ন সময়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। দলীয় প্রতীকের নির্বাচনও ভাঙতে পারেনি এই পারিবারিক বলয়।
১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ‘পারিপার্শ্বিক কারণে’ হাছন রাজা পরিবার থেকে কেউ প্রার্থী না হওয়ায় নৌকার অনুকূলে যে ‘একতরফা’ নির্বাচনী আবহ সৃষ্টি হয়েছে, তার বিপরীতে শক্তিশালী প্রার্থী দিতে বিরোধীদল বিএনপি ব্যর্থ হওয়ায় অনেকটাই নির্ভার আওয়ামী লীগ।
এবারের নির্বাচনে নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সুনামগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হোসেন বখতের ছেলে বর্তমান মেয়র নাদের বখত। ইতোপূর্বে তার দুই প্রয়াত সহোদর মনোয়র বখত নেক সুনামগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান ও আয়ূব বখত জগলুল মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বর্তমান মেয়র নাদের বখতের বিপরীতে বিএনপি’র মনোনয়ন পেয়েছেন ভোটের রাজনীতিতে নবাগত জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা মোর্শেদ আলম। জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা সাবেক এক পৌর কাউন্সিলর তাঁকে প্রার্থী করার বিষয়টিকে ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত’ বলে অভিযোগ করেছেন।
ভোটাররা বলছেন, হাছন পরিবার থেকে প্রার্থী না থাকায় এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত বখত পরিবারের শক্তিশালী প্রার্থীর বিপরীতে বিএনপি যাঁকে প্রার্থী দিয়েছে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় খুব একটা সুবিধা করতে পারবেন না। মেয়র নিয়ে নিরুত্তাপ ভোটের মাঠে মূলত কাউন্সিলর প্রার্থীরাই উত্তাপ ছড়াচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৯ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে, মেয়র পদে ফলাফল কী হতে যাচ্ছে- এমনটা আন্দাজ করতে পেরেই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে অনেকটা সাদামাটাভাবেই প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা, এমনটাই বলছেন অনেক বিএনপি নেতা।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, “নির্বাচনে যাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে তিনি ব্যক্তিবিশেষের প্রার্থী, দলের কিংবা জোটের নয়। তাকে প্রার্থী করার ব্যাপারে কারো সাথে পরামর্শ করা হয়নি। সুনামগঞ্জের অভিভাবক বেগম জিয়ার উপদেষ্টা ফজলুল হক আছপিয়া, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন, ভোটের মাঠে যার পরিবারের শক্তিশালী অবস্থান- তাদের কারোরই মতামত নেওয়া হয়নি এক্ষেত্রে।”
তিনি আরও বলেন, “অতীতের নির্বাচনে আরও তিন জন সম্মানী ব্যক্তিকে বিএনপির প্রার্থী করে সম্মানজনক ভোট দিতে পারেননি নেতারা। দুইজন দায়িত্বশীলের কারণে ধানের শীষ পৌরসভায় এতোটাই জনপ্রিয়তা হারিয়েছে যে, এখন আর এই প্রতীক নিয়ে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায় না। এবারের নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীকে সম্মানজনক ভোট পাইয়ে দিয়ে তাদেরকে প্রমাণ করতে হবে তারা আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করেননি।”
তিনি বলেন, “মোর্শেদ আলম যে নির্বাচনী ফিগার না সেটা পুরো জেলাবাসী জানে। ব্যক্তিগতভাবে ভাল মানুষ কিন্তু প্রার্থী হিসেবে দুর্বল মোর্শেদ আলমকে সামনে নিয়ে এসে আঁতাতের অংশ হিসেবে নিয়ম রক্ষা করা হয়েছে। এতে করে দল হেয়প্রতিপন্ন হয়েছে এবং নেতাদের দেউলিয়াত্ম ফুটে উঠেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও ১৬ জানুয়ারি যে ফলাফল আসবে সেটা হবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক। আমরা এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ চাই।”
সুনামগঞ্জ পৌর এলাকায় বিএনপির ভোটার বেশি থাকার পরও নেতাদের কারণে নির্বাচনে ধানের শীষ লজ্জাজনক ভোট পায় বলে মন্তব্য করেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা সাবেক পৌর কাউন্সিলর নোমান।