শামস শামীম ::
কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় সুনামগঞ্জের ১৪৯ জন বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা সাময়িক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ২৮ মে ‘মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বিতরণ সংক্রান্ত জেলা কমিটি’র সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। জানা গেছে, ২০১৭ সালে যাচাই-বাছাই কমিটি যাচাই-বাছাইকালে কাগজপত্র পরীক্ষা করে ‘গ’ তালিকা করেছিল। এই তালিকাভুক্ত ১৪৯ জনের ভাতা স্থগিত রাখার জন্য সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে এই স্থগিত নির্দেশিত তালিকায় যেমন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আছেন, তেমনি বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধাও রয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
জেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সনে সুনামগঞ্জেও সারাদেশের ন্যায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে যাচাই-বাছাই কমিটি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু করে। এ সময় ভারতীয় মুক্তিবার্তা ও লাল মুক্তিবার্তা না থাকায় আলাদা করে ‘গ’ তালিকা করা হয়। এই ‘গ’ তালিকারই অনেকে আপিল করেছেন। বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। ওই সময় সিদ্ধান্ত হয় যারা প্রকৃত কাগজপত্র ছাড়া ভাতা তোলছেন তাদের ভাতা উত্তোলন স্থগিত রাখার জন্য। কিন্তু সেটা প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সম্ভব হয়নি। অবশেষে গত ২৮ মে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বিতরণ সংক্রান্ত জেলা কমিটি’র সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১৪৯ জন বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা সাময়িক স্থগিত রাখতে সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের কথা সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা অফিস ও ব্যাংকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ১৪ জন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ২ জন, তাহিরপুরে ৫ জন, দোয়ারায় ১৭ জন, ছাতকে ৯ জন, জগন্নাথপুরে ৩ জন, দিরাইয়ে ১৮ জন, শাল্লায় ২২ জন, জামালগঞ্জে ৮ জন এবং বিশ্বম্ভরপুরে ৪৯ জন রয়েছেন। তবে ভাতা বন্ধের তালিকায় নেই ধর্মপাশা উপজেলার কোনো মুক্তিযোদ্ধা। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারও অমুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ তিনি প্রথমে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও পরে পালিয়ে এসে রাজাকারদের সহযোগিতা করেন। এ নিয়ে দুই বছর আগে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান সুনামগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদে আসলে এক সভায় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কমান্ডারকে নিয়ে কথা ওঠেছিল। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে বক্তব্য না দেওয়ার জন্য দাবি জানালেও তৎকালীন জেলা কমান্ডার তাকে দিয়ে বক্তব্য দেয়ান। এতে অনুষ্ঠানেই মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, ২০১৭ সনে আমরা যাচাই-বাছাই করার সময় ভারতীয় তালিকা ও লাল মুক্তিবার্তাকে প্রাধান্য দিয়েছি। যারা এই দুটি তালিকা দেখাতে পারেননি তাদের আলাদা তালিকা করা হয়েছিল। এই তালিকা ধরেই ভাতা স্থগিত রাখার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এটা কোথাও মানা হয়েছে, কোথাও মানা হয়নি। তবে সর্বশেষ সভায় ভাতা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ভাতা বন্ধ বলা যাবেনা। আমরা যাচাই-বাছাই কমিটির তালিকাসূত্রে কিছু মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা সাময়িক স্থগিত করার জন্য বলেছি। তবে তারা আপিল করতে পারবেন। এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্তের জন্য আমি ইউএনওদের বলেছি। কেউ যাতে হয়রানি না হন সেটা বলে দিয়েছি।