দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় হাওররক্ষাবাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের নমুনা বড়ই অদ্ভুত। এমন অদ্ভুত যে, যে-কারও মনেই হতে পারে, সমগ্র বাংলাদেশ না হোক অন্তত দিরাই ও শাল্লার অবস্থানটা মগের মুল্লুকেই পড়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। নিয়মমাফিক পিআইসি গঠন করার পর প্রভাবশালী একজন গঠিত পিআইসি বাতিল করে নিজের পছন্দমতো পিআইসি গঠন করছেন এবং বলছেন, সেটা (মগের মুল্লুক জাতীয় কাণ্ড) তিনি করছেন স্থানীয় সাংসদের নির্দেশানুসারে। অভিযোগ উঠার পর সাংসদ সে-নির্দেশ প্রদানের প্রসঙ্গটিকে অস্বীকার করছেন, এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ‘এমপি মহোদয়ের সাথে আলোচনা করেই পিআিইসি গঠন করেছেন’ বলে জানিয়ে দিয়েছেন, পূর্বকার পিআইসি বাতিল করেছেন বলছেন না এবং জেলা প্রশাসক ও কাবিটা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতিও অভিযোগ উঠার পর অভিযোগ পাননি বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে জেলাব্যাপী মানববন্ধন করার মাধ্যমে, গণমাধ্যমে সংবাদ ছাপা হয়েছে। দেশ শুদ্ধ লোকে জানে। কাজেকাজেই পিআইসি গঠন নিয়ে ‘একটা কীছু গরবর’ হচ্ছে এমন একটা বাস্তবতাকে অস্বীকার করার কোনও উপায় কোনও পক্ষেরই নেই। বরং অভিযোগ অস্বীকার না করে যেখানে অভিযোগের ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়াই হতো যথাযথ, সেখানে কোনও প্রতিকার করার আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না যারা এই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কীছু একটা করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন তাঁদের পক্ষ থেকে। এবং প্রকারান্তরে পিআইসি গঠনে অনিয়ম ও দুর্নীতি যাই বলি না কেন সেটা (অনিয়ম ও দুর্নীতি) অনুপ্রাণিত হচ্ছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে সুদৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। এই তিনটিকে (দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদক) শূন্যসহনশীলতা দেখাতে বলেছেন। অথচ পিআইসি গঠনের অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার আড়ালে প্রকৃতপ্রস্তাবে দুর্নীতির চর্চা হচ্ছে বলেই সাধারণ মানুষের ধারণা। নিয়মমাফিক গঠিত পিআইসিকে ব্যক্তি বিশেষ যদি বাতিল করে দিতে পারেন তবে সেটাকে কি দুর্নীতি না বলার কোনও যুক্তি আছে? সেটা স্পষ্ট নীতির লঙ্ঘন নয়?
সাধারণ মানুষের পর্যবেক্ষণকে মূল্য দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া অবশ্য কর্তব্য। অন্যথায় ২০১৭ সালে আবির্ভূত শোচনীয় দুর্যোগকে বরণ করার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে। পিআইসি বাতিল করে দুর্নীতি করার প্রয়াস যখন দুর্যোগরূপে আবির্ভূত হবে তখন বোধোদয় হবে এই সব দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতির চর্চা বন্ধ করা কেন জরুরি ছিল।