সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়া নাকি প্রায় দেড়কোটি বছর আগেকার জীববৈচিত্র্যকে এখনও ধারণ করে আছে। টাঙ্গুয়ার শরীর থেকে সে প্রাচীনত্বের চিহ্ন মুছে যাওয়ার লক্ষণ দৃশ্যমান হচ্ছে গত কয়েক দশক আগেকার সময় থেকেই এবং বাস্তবে শুরু হয়েছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্টীভবন। টাঙ্গুয়ার হাওরের এই পরিবর্তনের শরীরে আধুনিকায়ন নয় বরং একধরণের বিনাশীবৈশিষ্ট্যের ছায়াপাত ঘটেছে বলে কোনও কোনও বিদগ্ধজনের ধারণা। একটি জলাধার হিসেবে টাঙ্গুয়ার যেমন প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে তেমনি সুনামগঞ্জেরও একটি জনপদ হিসেবে প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে। সুনামগঞ্জের প্রাচীনত্বের সঙ্গে যে-টুকু পশ্চাদপদতা লগ্ন হয়েছিল সে-টুকু সেই ব্রিটিশামলের রাজনীতিক-অর্থনীতির ধারাবহিকতারই অবশেষ। ব্রিটিশ প্রশাসন এই অঞ্চলকে নি¤œভূমি হিসেবে বিশেষ বিশেষ ধরণের অবকাঠামোগত উন্নয়ন বরাদ্দের বহির্ভূত করে রেখে দিয়েছিল। বিশেষ করে যোগাযোগ অবকাঠোমো নির্মাণে সুনামগঞ্জ চিরকাল অবহেলিত ছিল, যে-কারণে এখনও সবকটি উপজেলার সঙ্গে যাকে বলে মানসম্মত কিংবা আধুনিক সড়ক অবকাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি। এই তো মাত্র বছর কয়েক আগে সুরমা নদীর উপর আব্দুজ জহুর সেতু নির্মিত হলো, যে-নির্মাণ কাজটি হতে পারতো আরও দশক কয়েক আগেই। নদী-খাল-বিল সমৃদ্ধ অর্থাৎ জলমগ্ন ভৌগোলিক এলাকা সুনামগঞ্জে সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা ব্রিটিশামল থেকেই তেমন প্রধান্য পায়নি এবং এখন বলা যায়, দেশের অন্যান্য জেলার কিংবা এলাকার সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়নের তুলনায় সুনামগঞ্জে আধুনিক সড়ক যোগাযোগ গড়ে তোলার কর্মকা- শুরু হয়েছে মাত্র। মোদ্দা কথা সুনামগঞ্জ দেশের লোকসংস্কৃতির স্বীকৃত রাজধানী হলেও আধুনিকায়নের বিবেচনায় একটি পশ্চাদপদ এলাকা, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সুনামগঞ্জ তার প্রাকৃতিক সম্পদ বালু-পাথর-ধান থেকে জাতীয় সম্পদের ভা-ারে প্রতি বছর যে পরিমাণ রাজস্ব জমা রাখে সে অনুপাতে এ জেলায় তেমন কোনও উন্নয়নের স্পর্শ লাগেনি স্বাধীনোত্তর কাল হতেই। যে-জন্য এ জেলায় পর্যটনশিল্প গড়ে ওঠার উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকলেও সেটা হয়ে ওঠেনি। হাওরাঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার করে বিশেষ শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা যায়, সুনামগঞ্জের জন্য তেমন উন্নয়নমূলক আধুনিক চিন্তা কারও মাথায় আসে না।
গত রোববার (০৪ নভেম্বর ২০১৮) একনেকের সভায় বঙ্গবন্ধু সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়েছে। দৈনিক সুনামকণ্ঠ এই সংবাদকে ‘অবকাঠামো উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা হাওরভাটির জনপদ সুনামগঞ্জবাসীর জন্যে সবচেয়ে আনন্দের সংবাদ’ বলে অভিহিত করেছে। একটি সংবাদপ্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি অনুমোদিত হওয়ায় জেলাবাসী আনন্দে উদ্বেলিত এবং তাঁরা তাঁদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থ-পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সঙ্গে এখানে একটি নার্সিং কলেজও প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জে চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী দ্বরোন্মোচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এই দুইটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা সুনামগঞ্জের পশ্চাদপদতার দুর্নামকে নির্মূল করে আধুনিকায়নের মহাসড়কের দুরন্ত অভিযাত্রী করে তোলবে সুনামগঞ্জ জেলাকে এবং আধুনিক একটি জেলা হিসেবে সুনামগঞ্জ জাতীয় উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে তার অবদান আরও বাড়িয়ে তোলবে।
আমরা আমাদের হাওরবান্ধব প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ ও অভিবাদন জানাই, তিনি সুনামগঞ্জের প্রতি কৃপাদৃষ্টি রেখেছেন এবং ভবিষ্যতেও রাখবেন। আমরা তাঁর এই বদান্যতাকে ভুলবো না। এই প্রকল্পকে সাফল্যের দ্বারপ্রন্তে টেন নিয়ে যাওয়ার কারিগর অর্থ-পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানকেও জানাই অভিনন্দন। আর যাঁরা তাঁর সঙ্গে দিনের পর দিন এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নেপথ্যে কাজ করেছেন তাঁদের প্রতিও রইল অভিনন্দন।