স্টাফ রিপোর্টার ::
কলোনী আমলে স্থাপিত দৃষ্টিনন্দন টিনশেডের প্রাক্তন কালেক্টরেট ভবনকে গত ক’বছর আগে সংস্কার করে তৈরি করা হয়েছে ‘সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য জাদুঘর’। জেলার নানাস্থান থেকে নিয়ে আসা হয়েছে ঐতিহ্যের নানা স্মারক। নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিজেদের ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত করতে ঐতিহ্য জাদুঘরে স্থান পেয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সংগ্রাম, প্রকৃতি, জীবনাচারসহ জেলার ঐতিহ্যনির্ভর নানা স্মারক। নিজেদের অম্লান ঐতিহ্যকে দেখতে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন নানা বয়সের মানুষ। বয়স্করা ছোটদের হাত ধরিয়ে দেখান সেগুলো। বিশেষ করে ছুটির দিনে ঐতিহ্য জাদুঘরে দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে।
শুক্রবার ছুটির দিন। বিকেলে ঐতিহ্য জাদুঘর ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায় বেশ কয়েকজন আসছেন সপরিবারে। ১০ টাকা জনপ্রতি টিকেট কেটে তারা ঘুরে দেখছেন ঐতিহ্য জাদুঘর। তাদের সঙ্গে থাকা শিশুরা ঐতিহ্য স্মারক দেখে নানা প্রশ্ন করছে। বড়রা দিচ্ছেন উত্তর।
বিভিন্ন দেয়ালে টাঙানো রয়েছে হাওরের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের নানা উপকরণ। রয়েছে মৃৎশিল্প, কারুশিল্প ও বাঁশ-বেত ও কাঠশিল্পের নানা উপকরণ। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় নানা উপকরণের সঙ্গে রয়েছে একাত্তরের খেতাবপ্রাপ্ত যোদ্ধাদের ছবি। যার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধকে জানার সুযোগ পাচ্ছে।
মো. ইয়াকুব, সৌরভ, রিপন, নূরুল আমিন নামে চার যুবক এসেছেন ঐতিহ্য জাদুঘরে। বাড়ি বিভিন্ন স্থানে হলেও কাজ করেন জেলা বিসিকে। লোকজনের কাছ থেকে শুনে ছুটির দিনে দেখতে এসেছেন জাদুঘর। ভালো লাগা মুহূর্তগুলো ধরে রাখতে ইচ্ছেমতো ছবি তুলেছেন চারজন মিলে। ঘুরে আসার পর এই প্রতিবেদকের সাথে আলোচনা করলেন ভালো লাগার বিভিন্ন দিক নিয়ে।
নূরুল আমীনের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার সাবিয়া নগর গ্রামে। সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য জাদুঘরে বেড়াতে আসা এই যুবক বলেন, আমি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় জাদুঘর দেখেছি। কেন্দ্রীয় জাদুঘরের মতো সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য জাদুঘর সমৃদ্ধ না হলেও এখানকার কর্তৃপক্ষের প্রয়াসের কমতি নেই। স্থানীয় ঐতিহ্যের নানা স্মারক এখানে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন তারা। উদ্যোগী হলে আরো সমৃদ্ধ করা সম্ভব। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জের মতো একটি পিছিয়ে পড়া জনপদে এমন একটি সংগ্রহশালা রয়েছে তা ভাবাই যায় না। এই সংগ্রহশালার প্রচার-প্রসারে প্রশাসন যদি আরো যুগ উপযোগী পদক্ষেপ নেন তাহলে এটিও দেশের একটি সম্পদে পরিণত হবে।
সৌরভের বাড়ি জেলার দিরাই উপজেলায়। ছুটির দিনে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে এসে তার ভালো লাগার নানা কথা জানালেন। সৌরভ বলেন, সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য জাদুঘরে রাখা জেলার বিভিন্ন নিদর্শন দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি এখানে এসে অতীতের নানা উপকরণ দেখতে পেয়েছি। যেগুলোর গল্প শুনেছি দাদা-দাদি নানা-নানীর কাছে। তাছাড়া হাওরে বিলুপ্ত হওয়া বিভিন্ন প্রজাতির মাছের নমুনা দেখতে পেরেছি। যা এখন আর হাওর বাঁওরে পাওয়া যায় না।
কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার সাবিয়া নগর গ্রামের ইয়াকুব বলেন, আমি ঐতিহ্য জাদুঘরের বিভিন্ন জিনিস অনেকক্ষণ দেখলাম। ভালো লাগলো। হাওরাঞ্চলে হারিয়ে যাওয়া অনেক উপকরণ এখানে সংগ্রহ করা হয়েছে। ভালো লাগার মুহূর্তগুলো ধরে রাখতে বন্ধুদের সাথে অনেক ছবি তুলেছি। আমি চাই এটা আরো সমৃদ্ধ করা হোক।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ঐতিহ্য জাদুঘরকে সমৃদ্ধ করতে আমরা নানা উদ্যোগের কথা চিন্তা করছি। এর মধ্যে পুরনো ভবনগুলোকে সংস্কার করার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ ও পর্যটনের বিভিন্ন দিকও ঐতিহ্য জাদুঘরে স্থান দেওয়া হবে।