স্টাফ রিপোর্টার ::
জালিয়াতির মাধ্যমে সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের হিসাব শাখা থেকে জমি অগ্রক্রয় মামলার ছয় বিচারপ্রার্থীর জমা ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫৭৫ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আটক দুই আইনজীবীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর তাদের জেলহাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। সুনামগঞ্জ জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের নায়েব নাজির সিফাত শাহরিয়ার সোমবার বিকেল ৩টায় সুনামগঞ্জ সদর থানায় চারজনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে প্রাথমিকভাবে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে জেলা ও দায়রা জজ মো. শহীদুল আলম ঝিনুকের কাছে।
রোবাবার বিকেল ৪টায় আদালতে বিচারপ্রার্থীর জামি অগ্রক্রয় মামলার জমা টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সুনামগঞ্জ জজ কোর্টের আইনজীবী ও যুবলীগ নেতা অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম এবং আদালতের হিসাবরক্ষক ঘেনু চন্দ্র রায়কে আদালত এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত মামলার অপর আসামি সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়ারা জজ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারি আব্দুস সোবহানকে পুলিশ গতরাতে ফেনী থেকে আটক করে সুনামগঞ্জে নিয়ে আসে।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আদালত এলাকায় লাঞ্ছিত হয়েছেন সাংবাদিক শহীদনূর আহমদ ও জাহাঙ্গীর আলম। তারা আসামিদের জেলহাজতে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ধারণ করতে গেলে কয়েকজন তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং ক্যামেরা কেড়ে নেন । পরে বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে তাদের ক্যামেরা ফিরিয়ে দেয়াহয়। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতারা। এদিকে, আদালতে অভিনব জালিয়াতির এই ঘটনাটি প্রকাশের পর সেটি ধামাচাপা দিতে উঠে-পড়ে লাগে একটি মহল। সাংবাদিক লাঞ্ছনার ঘটনায় এই মহল জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছেন সাংবাদিকরা।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, দুই আইনজীবীসহ আটক চার জানের বিরুদ্ধে আদালতের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলা এফআইআরভুক্ত করা হয়েছে। তদন্তপূর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ জজ আদলতে বিচরাধীন একটি অগ্রক্রয় মামলা নিষ্পত্তির পর আইনজীবী আলী আহমদ মোয়াক্কেলের আমানতকৃত টাকা উত্তোলনের জন্য আদলতে আবেদন করেন। দাপ্তরিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবার পর অর্থ পরিশোধের জন্য আবেদনটি হিসাব শাখায় পাঠানোর পর দেখা যায় অগ্রক্রয়ের মামলাটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আইনজীবী ও যুবলীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম হিসাব শাখায় পেমেন্ট অর্ডার দাখিল করে অগ্রক্রয়ের ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন। বিষয়টি জানাজানির পর এমন জালিয়াতির আরও ৫টি ঘটনা ধরা পড়ে। ছয় ঘটনার পাঁচটিতে মাজহারুল ইসলাম ও একটিতে রেজাউল করিম সংশ্লিষ্ট রয়েছেন।
জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস জানায়, অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম পাঁচটি অগ্রক্রয় মামলায় জালজালিয়াতির মাধ্যমে নিজ ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৫৭৫ টাকা উত্তোলন করেন। আরেকটি বিবিধ অগ্রক্রয় মামলায় ২ লাখ ৩১ হাজার টাকা একই কায়দায় উত্তোলন করেছেন আইনজীবী মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি অবগত হবার পর সুনামগঞ্জ সদর আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন টাকা উত্তোলনকারী দুই আইনজীবী ও হিসাবরক্ষক ঘেনু চন্দ্র রায়কে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য বুধবার আদেশ দেন। তাদের কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় রোববার জেলা জজের নির্দেশে ৩ জনকে আটক করে পুলিশ।
সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ শায়েখ আহমদ জানান, আদলতের হিসাব শাখার কর্মচারীদের সহযোগিতায় বিচারপ্রার্থীর জমি অগ্রক্রয় মামলার জমা অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে আদালত ও আইনজীবীদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গাটা সুরক্ষিত থাকে।