1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০১:২২ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ভালো নেই কথিত চোরাপল্লী : কামারগাঁওবাসী মিলছেনা সহায়তা

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

বিশেষ প্রতিনিধি ::
সামাজিক বৈষম্য, অবহেলা ও চরম দারিদ্র্যের কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার বহুল আলোচিত ও কথিত চোরাপল্লী কামারগাঁওয়ের বাসিন্দারা। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সরকারি প্রণোদনাসহ অবকাঠামো উন্নয়ন থেকেও বঞ্চিত তারা। কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলে কথিত চোরের গ্রামের বাসিন্দারা মূল স্রোতে ফিরে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও সহায়তার হাত নিয়ে কেউ দাঁড়াচ্ছে না।
১৯৯১ সনের জাতীয় নির্বাচনে ভোটার তালিকায় পেশা ‘চোর’ উল্লেখ করে জাতীয়ভাবে আলোচনায় আসে শাল্লা উপজেলার কামারগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা। উপজেলার দুর্গম এই গ্রামটি চারদিকে হাওর বেষ্টিত। হেমন্তেও গ্রামে যাওয়ার সরাসরি কোন রাস্তা নেই। মুক্তিযুদ্ধে এই গ্রামবাসীর অসামান্য অবদান থাকলেও স্বাধীনতার পর থেকেই গ্রামবাসী অবহেলিত। শিক্ষা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসহ নানা দিক থেকেই তারা পিছিয়ে আছে। গ্রামের সবাই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। খুঁপড়ি ঘরগুলোতে গাদাগাদি করে বাস করে একাধিক পরিবার। বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের কোন ব্যবস্থা নেই গ্রামে। ভালো হওয়ার চেষ্টা থাকলেও পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তার অভাবে এখনো কিছু মানুষ হাতটানের অভ্যেস ছাড়তে পারেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরম উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার গ্রামটিতে বর্তমানে গ্রামে ৩২টি খুঁপড়ি ঘরে প্রায় ১ হাজার মানুষের বাস। এই বর্ষায়ও গ্রামটিকে বিরান মনে হয়। প্রতিটি খুঁপড়ি ঘরেই একাধিক পরিবার বসবাস করে। গ্রামে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত পুরনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও নিয়মিত পাঠদান হয় না। শিক্ষকরা নিয়মিত আসেন না বিদ্যালয়ে। তাছাড়া অভাবের কারণে শিক্ষার্থীরাও আসেনা। গ্রামের গৃহহীন ৫টি পরিবার তিন রুমের স্কুলের দুটি রুমে বসবাস করছে দীর্ঘদিন ধরে।
এদিকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী, পরিবার পরিকল্পনা কর্মী, সমাজসেবা অফিসের কর্মী এবং কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ে কাজ করা কর্মীদের সেবা পায়না গ্রামবাসী। কেউ চিনেওনা তাদেরকে। পরিবার পরিকল্পনার ধারণা নেই অনেক নারী পুরুষের। চরম দারিদ্র্য আর অবহেলা নিয়ে দিনযাপন করছে এই গ্রামের বাসিন্দারা। চুরির কারণে এলাকাবাসী ঘৃণা করায় তাদের কাছে বিয়েশাদিও দেওয়া হয় না। তাই নিজেদের মধ্যেই বিয়েশাদি করে তারা। অভাব-অনটনের কারণে প্রায়ই গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একাধিকবার নিজেদের মধ্যে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটেছে।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে ভিজিএফ-ভিজিডি বয়স্কভাতাসহ নানা প্রণোদনা দিলেও এই গ্রামের খুব কম মানুষই পায় সেই সুবিধা। সামাজিক ঘৃণা আর অবহেলার কারণে এই বৈষম্য চলছে যুগ যুগ ধরে। তাছাড়া চুরি দেবার পরও শান্তিতে থাকতে পারেনা তারা। আশপাশের এলাকায় কোন চুরির ঘটনা ঘটলে আসামি হয় এই গ্রামের পুরুষেরা। জানা গেছে এলাকায় অবস্থান না করেও আসামি হয়েছে নিরীহ মানুষেরা। চুরি-মারামারি-মাদকসহ নানা মামলায় এই গ্রামের অনেকে জেলে আছেন। বিভিন্ন মামলার আসামি আছেন অন্তত দুই শতাধিক।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এনজিওগুলো গরিব ও হতদরিদ্র মানুষের উন্নয়নে কাজ করছে। হাওরের নানা গ্রামে উন্নয়নমূলক ও সহায়তামূলক কর্মসূচি পালন করলেও এই গ্রামটি উপেক্ষিত। অবহেলা আর ঘৃণা থেকে কোন এনজিও এই গ্রামে কাজ করতে চায়না। এমনকি দাতা সংস্থা থেকে হাওরের হতদরিদ্র মানুষের উন্নয়নের কথা বলে যেসব সংগঠন কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ আনছে জেলার সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা এই গ্রামটিতে সেই বরাদ্দের ছিটেফোটাও দেওয়া হয় না। গ্রামের শিশুরা বেড়ে ওঠছে অনাদর অবহেলা আর পুষ্টিহীনতায়।
জানা গেছে, গত জুন মাসে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি শাল্লা উপজেলায় প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো সহায়তা প্রদান করেছে। গ্রামের লোকজন ও স্থানীয় কিছু সচেতন মানুষ গ্রামটিতে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিকে সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানালেও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি।
গ্রামের হতদরিদ্র নারী জোছনা বেগমের স্বামী ৬-৭ বছর আগে স্ত্রী ও এক মেয়ে রেখে মারা গেছেন বিনাচিকিৎসায়। এই অসহায় নারী একটি খুঁপড়ি ঘরে তার ৭৫ বছর বয়সী মাকে নিয়ে থাকেন। ভিক্ষা করে সংসার নির্বাহ করেন তিনি। কিন্তু ‘চোরের গ্রামে’র বাসিন্দা হিসেবে এলাকার মানুষ অনেক সময় ভিক্ষাও দিতে চায়না। সরকারি ভিজিএফ-ভিজিডিসহ কোন সহায়তা পাননি এই হতদরিদ্র নারী। তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ অনেককে তার বৃদ্ধা মাকে বয়স্ক ভাতা দেওয়ার অনুরোধ জানালেও ‘দূরদূর’ করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাকে। জোছনা বেগম বলেন, ই গ্রামের হকলের চেয়ে গরিব আমি। ভাই এক অক্ত খাই, আরেক অক্ত খাওন পাইনা। বড় কষ্টে বুড়া মা ও আমার মেয়েরে লইয়া থাকি। কেউ কুন্তা দেয়না। ভিক্ষা খইরা খাই।
গ্রামের কালু মিয়া (৭০) ১০ ফুট বাই ১০ ফুট একটি খুঁপড়ি ঘরে স্ত্রীসহ থাকেন। একই ঘরে তার ছেলে, ছেলে বউ ও নাতি নাতনিরা গাদাগাদি করে থাকে। তিনিও সরকারি বেসরকারি কোন সহায়তা পাননা। তার ছেলে ও তিনিও মামলার আসামি। তিনবেলা পেটভরে খাবারের ব্যবস্থা নেই তার পরিবারে। কালু মিয়া বলেন, বাবারে অভাবের কতা কিতা খইমু। আমরারে এই এলাকার নেতারা ব্যবহার করে। কিন্তু কোন সাহায্য আমরারে দেয়না। আমরার গ্রামে কোন উন্নয়ন কইরা দেয়না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাছুম বিল্লাহ বলেন, কামারগাঁও গ্রামের কথা শোনেছি। এক সময় তারা চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও এখন তারা সরকারের নানা সহায়তা ও নজরদারির কারণে ঘৃণার পেশা থেকে সরে আসছেন। আমরা এই গ্রামেও অন্যান্য গ্রামের মতো সরকারি সহায়তা বরাদ্দ দিয়ে থাকি। তিনি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এই গ্রামে সহায়তামূলক ও উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম চালানোর অনুরোধ জানান।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com