সুনামগঞ্জের দেড় লাখ ক্ষতিগ্রস্ত, ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও হতদরিদ্র চাষীর জন্য বিশেষ ভিজিএফ নিয়ে তেলেসমাতি কা–কারখানা শুরু হয়েছে। জেলাজুড়ে বিভিন্ন খাতের সরকারি বরাদ্দের চাল নিয়ে শুরু হয়েছে চালবাজি। এখন বিশেষ ভিজিএফ নিয়েও শুরু হয়েছে তেলেসমাতি কা-। জেলার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ ভিজিএফ’র চাল প্রথম কিস্তির ৩৮ কেজির বদলে দেওয়া হয়েছে ৩২ কেজি। বিভিন্ন স্থানে নাম তালিকাভুক্ত করতে গিয়ে টাকা নিয়েছেন কিছু চেয়ারম্যান-মেম্বার। সুবিধা নিয়ে একই পরিবারে স্বামী, স্ত্রী, পিতা-পুত্র, ভাইসহ একাধিকজনকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তালিকায় রয়েছেন লন্ডনি পরিবারের লোকজনও। আগামীতে ত্রাণ দেয়া হবে না এই ভয়ে ওজনে কম দেওয়া সত্ত্বেও মেনে নিয়েছে গ্রামের সহজ-সরল কৃষকেরা।
সুনামগঞ্জ ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ এপ্রিল শাল্লা উপজেলায় এসে ৯০ দিনের বিশেষ ভিজিএফ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই দেড় লাখ কৃষককে এই ৩০ কেজি চাল ও ৫শ’ টাকার প্রথম কিস্তির চাল ও টাকা প্রদান করা হয়। এক সপ্তাহ আগে প্রথম কিস্তি সম্পন্ন হয়েছে। ‘ইউনিয়নের মানবিক সহায়তা কমিটি’ এই তালিকা করেছে বলা হলেও এই কমিটিতে কে আছে জানেনা ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ।
এদিকে, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে ৯নং ওয়ার্ডে মৃত ব্যক্তির নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য তার তিন সন্তানসহ আপন ভাইয়ের দুই মাস বয়সী সন্তানকেও তালিকাভুক্ত করে বরাদ্দ তুলে নিয়েছেন।
জানা গেছে, শুরুতেই তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বদলে পুরনো কৃষিকার্ড ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে কৃষি বিভাগের দেওয়া তালিকা ধরে চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তালিকা করেন। কোথাও কোথাও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতারাও তালিকা তৈরিতে যুক্ত ছিলেন। অনেক স্থানে তালিকায় নাম ওঠাতে প্রকাশ্যে টাকাও নেওয়া হয়েছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বদলে চাষের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান এমন লোকদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অনেক স্থানে ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও হতরিদ্র চাষী হিসেবে এই ভিজিএফ সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও তাদের বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তাদের একাধিক আত্মীয়ের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন।
বাঁধ ভেঙে জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরের জেলায় এবছর প্রথম ডুবেছিল। এই হাওরের কৃষকদের বিশেষ ভিজিএফ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের সদস্যরা। এই ইউনিয়নে একই পরিবারে, পিতা-পুত্র-ভাই, স্বামী-স্ত্রীকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। পরিবারের সবাই লন্ডনে অবস্থান করছে এমন ধনাঢ্য পরিবারও রয়েছেন বিশেষ ভিজিএফ তালিকায়। তালিকায় নাম থাকার পরও একাধিকজনকে ত্রাণ দেওয়া হয়নি। ত্রাণ চাইতে গিয়ে তাদের মারধর করা হয়েছে। একই ব্যক্তির নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে একাধিকবার এমন ঘটনাও রয়েছে।
এভাবে শুধু জগন্নাথপুর উপজেলার ওই ইউনিয়নই নয়, জেলার অনেক ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা সুবিধা নিয়ে তালিকা তৈরিতে নয়ছয় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সদর উপজেলার মোহনপুর, কাঠইর, গৌরারং, জামালগঞ্জের ফেনারবাক ইউনিয়নসহ অনেক ইউনিয়নেই তালিকায় অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি হয়েছে বলে কৃষকদের অভিযোগ।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ত্রাণ নিয়ে অনিয়ম কখনোই কাম্য নয়। এসব অনিয়ম বন্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। তা না হলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা উপকার পাবেন না। আর ইতোমধ্যে যারা ত্রাণ নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করার জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই।