হাওরের ফসলহানির প্রভাব এখন শিক্ষাজীবনকে বিপন্ন করে তোলছে। হাওর এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এ পর্যন্ত মাধ্যমিক পর্যায়ে সোয়া লাখ শিক্ষার্থী এবং প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধে চলতি বছর সুনামগঞ্জের স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের বেতন মওকুফ, এসএসসি উত্তীর্ণদের ভর্তি ফি মওকুফসহ সকল শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বিশেষ বৃত্তিপ্রদানের দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষাবিদরা।
সম্প্রতি এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কলেজের ভর্তি ফি স্থগিত রাখার দাবিতে মানববন্ধন-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সুধীজন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ফোরামে এই দাবিতে বিশেষ অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষাবিদরা। দাবিটি যথাযথভাবে গুরুত্ব না পাওয়ায় নিঃস্ব কৃষকের সন্তানরা বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়ায় তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্র মতে, সুনামগঞ্জের মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার ৩৮১ জন শিক্ষার্থী চলতি বছর পড়ালেখা করছে। হাওরের একমাত্র ফসল ডুবে যাওয়ার পর এ পর্যন্ত ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পড়–য়া ১০ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে চলতি বছর প্রায় ৩ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। ইতোমধ্যে হাওরে দুর্যোগ নেমে আসায় ১২ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে গেছে। মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ ঝরেপড়া রোধে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে ঝরেপড়া রোধে জেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুলফিডিং কর্মসূচি চালুর লিখিত আবেদন জানিয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৭ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ হাওরের এই ভয়াবহ দুর্যোগ প্রত্যক্ষ করে সুনামগঞ্জে ছুটে আসেন। ওই রাতে তিনি জেলা শহরে সুধীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। মতবিনিময় সভার আগে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের উচ্চ বিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থীদের সবাইকে উপবৃত্তি প্রদানের অনুরোধ জানান। ওই সভায় সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর পরিমল কান্তি দে রাষ্ট্রপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলতি বছর সুনামগঞ্জের স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের বেতন মওকুফ, এসএসসি উত্তীর্ণদের ভর্তি ফি মওকুফসহ সকল শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বিশেষ বৃত্তিপ্রদানের অনুরোধ জানান। গত ১৯ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ত্রাণমন্ত্রীর মতবিনিময় সভায় সুধীজন আবারো একই দাবি জানান। এভাবে গত একমাস ধরে সুধীজন এই দাবিতে নানা ফোরামে কথা বলে আসছেন। গত সোমবার সুনামগঞ্জ জেলা শহরে ছাত্র ইউনিয়ন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসএসসি উত্তীর্ণদের বেতন ও ভর্তি ফি মওকুফের দাবিতে সমাবেশ করেছে। এভাবে জেলার বিভিন্ন স্থানে ত্রাণসামগ্রী প্রদানের পাশপাশি কৃষকদের ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে দাবি জানাচ্ছেন সুধীজন।
সুনামগঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২০ হাজার ১২২জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ১৬ হাজার ৩৬২ জন। দাখিল ও টেকনিক্যাল মিলিয়ে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এখন উত্তীর্ণদের কলেজে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে পরিবার। কলেজের ভর্তি ফি, নতুন বই ক্রয়, পোশাক ক্রয়সহ এইচএসসি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জনপ্রতি প্রায় ৫-৭ হাজার টাকার লাগবে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, চলতি বছর জেলায় ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে ৯০ ভাগ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার ৬১৭।
আমরা মনে করি, হাওরাঞ্চলে শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া সুনামগঞ্জ আরও পিছিয়ে পড়বে। সরকার এ ব্যাপার পদক্ষেপ নেবে এটাই প্রত্যাশা।