1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ১২:১৮ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

মহোদয়গণ একবার আয়নার সামনে দাঁড়ান, নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন

  • আপডেট সময় সোমবার, ৮ মে, ২০১৭

কাদের জন্য হাওরবাসী সীমাহীন ভোগান্তি আর দুর্দশায় পড়েছেন তা আজ জলের মতো স্বচ্ছ। ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে নিয়োজিত দুর্নীতিবাজ পাউবো কর্মকর্তা, ঠিকাদার, পিআইসিরা এর জন্য দায়ী। পাউবো’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দুদকের কাছে অনিয়ম-দুর্নীতির কথা স্বীকার করলেও ঠিকাদার সিন্ডিকেট এ ব্যাপারে পরোয়া করছে না। উল্টো তারা বাঁধের কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি; বাঁধ ভেঙে নয় উপচে হাওরের ফসল তলিয়েছে, পিআইসিরা বাঁধে কাজ করেনি এসব নানা যুক্তি উপস্থাপন করছে। এমনকি তারা বিল প্রদানের জন্যও দাবি তুলছে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে।
এক ঠিকাদারের উক্তিÑ ‘জলবায়ু পরিবর্তন, অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলের কারণে বাঁধ উপচে হাওরের ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোন হাওরে ঠিকাদারের বাঁধ ভেঙে ফসলহানির ঘটনা ঘটেনি। কাজেই ঢালাওভাবে অভিযোগ না করে সরেজমিন গিয়ে দেখে আসুন। এখনও কাজগুলো দৃশ্যমান আছে।’
বাহ! কী চমৎকার দেখা গেল! সত্যিই পারেন! যেখানে বাঁধের কোনো কাজই হয়নি তার আবার দৃশ্যমান আর অদৃশ্যমান কি? দিনকে রাত, রাতকে দিন বলাটা হয়তো স্বভাবজাত হয়ে উঠেছে।
চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জে প্রায় সোয়া দুই লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়। এর মধ্যে ৩৭টি বড় হাওরসহ মোট ৪২টি হাওরের ফসলরক্ষার জন্য ঠিকাদার ও পিআইসির মাধ্যমে বেড়িবাঁধ ও বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বাঁধ নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি কাজের অনুকূলে ৪৮ কোটি টাকা এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির অনুকূলে ১১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। চৈত্রের মাঝামাঝি এসে আগাম ঢলে একের পর এক হাওরের ফসল তলিয়ে যেতে শুরু করে। এক পর্যায়ে জেলার সবগুলো হাওরের ফসলই বাঁধ ভেঙে পানির তলিয়ে যায়। এতে আবাদকৃত ফসলের ৯০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানান কৃষকরা। বছরের একটিমাত্র ফসল হারিয়ে জেলাজুড়ে হাহাকার পড়ে যায়। জেলা বাঁধ নির্মাণে ঠিকাদার ও পিআইসি’র বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
আমরা জেনেছি, এবার হাওরের বাঁধ নির্মাণ কাজ সম্পন্নের জন্য ঠিকাদারদের ৩১ মার্চ সময় বেঁধে দেয় পাউবো। কিন্তু বেশিরভাগ ঠিকাদার ২০ থেকে ৪০ ভাগ কাজও করেননি। কার্যাদেশ নিয়ে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কাজ শুরু করেননি অনেক ঠিকাদার। এই সত্যকে দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার এবং তাদের দোসররা কিভাবে অস্বীকার করবে?
নিজের দুর্নীতিকে আড়াল করার জন্য দুর্নীতিবাজরা ফন্দি আঁটবে এটাই স্বাভাবিক। কয়েকজন ‘নির্মাতা’ ও ‘পরিচালক’ পরিচালিত-প্রযোজিত ‘প্যাকেজ প্রোগ্রাম’ আমরা এবার অবলোকন করতে শুরু করেছি। ঠিকাদার, ভাগিদারের সাথে এবার যুক্ত হয়েছে ‘সাফাইদার’। ঠিকাদার সিন্ডিকেট নিজেদের সাফাই তদন্ত কমিটির কাছে তুলে ধরতে এবং প্রকৃত সত্যকে আড়াল করতে ‘সাফাইদার’দের নিয়ে আসছে। রোববার সন্ধ্যায় তাদের সংঘবদ্ধ উপস্থিতি দেখা যায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান সুনামগঞ্জের প্রাক্তন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী খানের সঙ্গে স্থানীয় সুধীজনের মতবিনিময় সভায়। সংঘবদ্ধ হয়ে ঠিকাদাররা তাদের সাব ঠিকাদার ও অন্যান্য সুবিধাভোগীদেরও মতবিনিময় সভায় নিয়ে গিয়েছিলেন। যারা ঠিকাদারদের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে চেয়েছেন তাদের থামিয়ে দিতে সমস্বরে কথা বলতে দেখা যায় ঠিকাদারদের। উল্টোটাও আবার হয়েছে। ঠিকাদারদের পক্ষে কথা বলেছেন যে সাফাইদাররা এ সময় ঠিকাদার ও তাদের লোকদের হাততালি দিতে দেখা গেছে। আবারো বলি- বাহ! কী চমৎকার! প্যাকেজ সিরিয়ালের তো শেষ নেই।
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে লুটপাট শেষে এবার তারা ‘দুর্নীতিবাজদের রক্ষা কাজে’ নিয়োজিত হয়েছে। শাবাশ খেলারাম খেলে যা…! তবে বাঁধের কাজে যেভাবে তারা ব্যর্থ হয়েছে দুর্নীতিবাজদের রক্ষা কাজেও তারা ব্যর্থ হবে। আমরা ইতোমধ্যেই দেখেছি, বিভিন্ন তদন্তে থলের বিড়াল, কাউয়া বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। সুনামগঞ্জের ফসলহারা মানুষ তাদের জাতকে চিনে ফেলেছে। মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন সুনামগঞ্জবাসী, তাদের সাথে একাত্ম হয়েছেন দেশের আপামর সচেতন মানুষ।
একজন ঠিকাদার জানিয়েছেন, ‘তারাও রক্ত-মাংসের মানুষ। তাদেরও হাওরবাসীর জন্য কান্না পায়।’ ঠিকই বলেছেন! হাওরবাসীর জন্য যে কান্নার কথা বলেন সেটি ‘মায়াকান্না’। আপনাদের পরিবার আছে, সন্তানাদি আছে, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এসব বলছেন। কিন্তু হাওরবাসীর যে ক্ষতি করেছেন তা তো একবারও বললেন না। আপনারা একবারও ভাবলেন না- লাখ লাখ দরিদ্র কৃষকেরও তো পরিবার আছে, তাদের সন্তান আছে, স্বপ্ন আছে। তাহলে কোন বিবেকে বাঁধের কাজে অনিয়ম করলেন। কোন বিবেকে লুটপাট চালালেন। কেন এই দুর্দশা, হাহাকার, ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনলেন হাওরজুড়ে। মহোদয়গণ একবার আয়নার সামনে দাঁড়ান, নিজেকে প্রশ্ন করুন, যে অন্যায় করেছেন তার জন্য ক্ষমা চান। তওবা করুন। মনে রাখবেন, হাওরে যে মহাদুর্যোগ আপনারা ডেকে এনেছেন তার জন্য আপনারা কখনো ক্ষমা পাবেন না। দুর্নীতিবাজদের মানুষ অন্তর থেকে ঘৃণা জানিয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতির প্রমাণ পেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমরা তাঁর কথা আশান্বিত। আমরা জানি, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যে প্রতিশ্রুতি দেন তা সব সময়ই রাখেন। এবারো তাঁর প্রতিশ্রুতি ব্যত্যয় হবে না বলে বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি, যারা হাওরবাসীর মুখের আহার ছিনিয়ে নিয়েছে, দুর্ভোগ, দুর্গতি আর দুর্বিপাকে ফেলে দিয়েছে তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া উচিত হবে না। এবারো যদি তারা পার পেয়ে যায়, তাহলে এই দুর্নীতি কখনো রোধ করা সম্ভব হবে না। শেখ হাসিনার নৌকার উপর ভর করে তারা হাওরে লুটপাট চালাবে, হয়ে উঠবে কাউয়া থেকে হাওরের হাঙর। তাই এখনই সময় দুর্নীতিবাজদের টুটি চেপে ধরার।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com