1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৯:৫৩ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বৈশাখে হাওরবাসীর পাতে কী থাকবে?

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৭

পূরবী তালুকদার
কথা ছিলো এবারের ফসল ওঠার পরে ঋণ-দেনা যা ছিলো সব পরিশোধ করে বাড়তি টাকা দিয়ে ছেলে-মেয়ের জন্যে নতুন জামা কেনার। আমাদের ছোটবেলায় পূজায় নতুন জামার কথা ভাবিনি, কিন্তু বৈশাখে নতুন ধানের সাথে সাথে নতুন জামার প্রত্যাশা অমলিন হয়নি কখনো। নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত অনেক কৃষক পরিবারেরই এমন স্বপ্ন/পরিকল্পনা থাকে বৈশাখের এই ফসলকে ঘিরে। কেউ কেউ ধান মাচায় তুলে রাখে দাম বাড়লে বিক্রি করে সেই টাকায় আষাঢ় মাসে মেয়ে বিয়ে দেবে অথবা ছেলে বিয়ে করাবে। হাওর অঞ্চলের মানুষের অনেক বড় একটা পার্বণ এই বৈশাখ, উৎসবের মধ্য দিয়ে নতুন চালের ভাত মুখে দেয় প্রতিটি পরিবার। চৈত্র মাসের শেষের দিক থেকে শুরু হয় ধান কাটার উৎসব- খলায় থাকে নানা জাতের ধান আর গলায় বিভিন্ন সুরের গান। চৈত্রসংক্রান্তির দিনে সকালে পাঁচ তরকারি (গিমাই শাক, কাঁচা কাঁঠাল, আম ডাল, ছোট মাছ, বেগুন ভাজি) আর ভাত রেঁধে আর বিকেলে ষাঁড়ের লড়াই (আড়ং) দিয়ে বৈশাখকে বরণ করে নেয় হাওরের মানুষ। ঠিক একই নিয়মে শেষ দিনে বিদায় জানানো হয় বৈশাখকে। হাওরে এই দুটি উৎসবকে বলা হয় আগ-বিষু আর শেষ-বিষু। গভীর রাতে শোনা যায় দূর থেকে ভেসে আসা বাঁশির সুর। হয়তো কেউ গরু দিয়ে ধান মাড়াই দিচ্ছে আর বাঁশি বাজাচ্ছে। বৈশাখ মাসে এই দেশের প্রতিটি হাওরের এই একই চিত্র থাকে।
দিন নেই রাত নেই, প্রতিটি নারী-পুরুষ সমান শ্রম দিয়ে ধান লাগানো, ধান তোলা এবং প্রক্রিয়াজাত করার কাজে ব্যস্ত থাকে। হাওরের মানুষগুলোর বুক ভরা স্বপ্ন এরই মধ্যে ভয়ানক এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। চোখ মেলে তাকানোর আগেই সব ধান তলিয়ে গেছে বাঁধভাঙা পানির তোড়ে, সব আশা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে জলে।
বিগত কয়েক বছর ধরেই এই একই ঘটনা ঘটছে, ফসল তোলার আগেই নড়বড়ে বাঁধ ধসে পানি চলে আসছে। গত বছরও আমাদের ধান চলে গেছে নয়নভাগায়। পাকা ধান যখন পানিতে তলিয়ে যেতে থাকে তখন তার আর মালিক থাকে না। যে যতটুকু কেটে নিতে পারে সে ধান তার হয়ে যায়। তবে এবার আর নয়নভাগা হয়নি, কারণ ধান যে এখনো কাঁচা। এর একটি ধানও কাটার বা কাজে লাগানোর কোনো উপায় ছিল না। বছরের পর বছর ধান তুলতে না পেরে হাওরের কৃষকরা চরম বিপর্যস্ত। এই তালিকায় আমার কৃষক বাবাও রয়েছেন। যদিও আমরা ভাইবোনেরা মিলে এবার তাকে ধান চাষ করতে নিরুৎসাহিত করেছি, তারপরেও খাবার ধানের জন্য অল্প কিছু জমি চাষ করেছিলেন।
চাষ থেকে কৃষককে সরিয়ে দেয়া মানে হচ্ছে তার প্রাণ ধরে টান মারা, সেটা আমরা করতে পারিনি। যাহোক, যেটুকু জমিতে চাষ করা হয়েছিল, তার পুরোটাই তলিয়ে গেছে জলে। বাইরে থেকে যাদের আয়ের উৎস আছে তারা হয়তো চাষ না করেও পারে কিন্তু যাদের আর কোনো অবলম্বন নেই, ঝুঁকি নিয়ে হলেও তাদের কৃষির উপর নির্ভর করতে হয়- নতুন ধানের আশায় দিন গুনতে হয়। সেইসব মানুষেরা এবার সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন।
হতাশা আর চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে প্রতিটি পরিবারের। চালের আড়তগুলোতে ভিড় বাড়ছে, দাম বাড়ার কারণে অনেকে ভাত খাওয়ার চালটুকুও কিনতে পারছে না। গরু বিক্রির লাইন শুরু হয়ে গেছে হাটে, কে কিনবে? সবার একই অবস্থা। আগমনী আর বিদায় আজ মিলেমিশে একাকার, কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখেছেন- তার বিনিয়োগ আর শ্রম-ঘামের ক্ষেত ডুবে যায় বিসর্জনের দেবীর মত। নিজেরা কী খাবেন, আর গোয়ালের গরুগুলোই বা সারাটা বছর কী খাবে?
এতোটুকু খড়ওতো নেই। প্রতিটি পরিবার যার যা আছে তাই নিয়ে শহরে আসার পরিকল্পনা করছে। একটাই কথা, গার্মেন্টসে কাজ করবে, কম হোক আর বেশি হোক, মজুরি পাক বা না পাক চোখের সামনে অন্তত এমন দৃশ্য আর দেখতে হবে না। কোনো কোনো পরিবার পাড়ি জমাচ্ছে সুনামগঞ্জ-ছাতক-চুনারুঘাটে পাথর ভাঙবে বলে।
লাখ লাখ পরিবারের এই দুর্বিষহ চালচিত্র একটি দিনের জন্যও জাতীয় সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়নি, তাতে যে রাজা-রাজড়াদের কাহিনী বর্ণনায় টান পড়ে যাবে! দেশে নতুন সাবমেরিন এসেছে- কিন্তু হাওরের কৃষকের সুরক্ষা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। এই কৃষকদের বাদ দিয়ে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে কোন সুদূরে যেতে চাই আমরা? সেখানে কী অগণিত মানুষের সন্তানদের জন্য ডাল-ভাতের ব্যবস্থা থাকবে? নাকি অল্প কিছু মানুষের জন্য কেবল কোর্মা-পোলাও?
মাহা মীর্জা তার লেখা এক কবিতায় প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন-এমন দিন কী আসবে যেদিন রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি হবে চাষার, চৈত্রের বোরো ক্ষেতে সৈন্য পাঠাবে রাষ্ট্র? নলুয়ার বাঁধগুলো পাহারা দেবে সারি সারি ডুবোজাহাজ? তার কবিতার শেষ চার লাইন দিয়ে শেষ করছি-
এমন দিন কি আসবে
প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে
নজুমিয়ার বাড়ির উঠানে, চাদর পেতে।
রাষ্টের সঙ্গে ৮ কোটি চাষার?
লেখক: রাজনৈতিক আন্দোলন কর্মী

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com