1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ১১:৩৫ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

দুর্যোগের ক্ষতি থেকে বাঁচতে প্রয়োজন কৃষি বীমা : মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৭

হাওর অঞ্চলের একমাত্র বোরো ফসল বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে গেছে হাজারো স্বপ্ন। লাখো প্রাণ এখন অনিশ্চয়তার মুখে। এমন দৃশ্য প্রায় প্রতিবছরই। দুর্যোগ আর সংকট যেন হাওরবাসীর নিয়তি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হাওরের জীববৈচিত্র ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এবং অবৈজ্ঞানিক, অপরিকল্পিত, অদূরদর্শী, অসময়ের উন্নয়ন কৌশল কৃষকের জন্য মরণ ফাঁদ। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ এবং দুর্যোগ মোকাবেলা করে কৃষকের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন কৃষি বীমা।
কৃষির প্রতি এমনিতেই মানুষের আগ্রহ দিন দিন কমছে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়া এবং ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে এ খাতে মানুষের অনিহা বাড়ছে। তবুও বাপ দাদার পেশা আর নিজস্ব জমিজমার বদৌলতে বাঁচার তাগিদে বাধ্য হয়ে কৃষিকেই আঁকড়ে আছে সিংহভাগ মানুষ। তার উপর যদি এ ধরনের ধারাবাহিক বিপর্যয়ের কবলে পড়তে হয় তাহলে এই পেশার প্রতি সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। কৃষির প্রতি মানুষের আগ্রহ ও আস্থা অটুট রাখতে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা জরুরি। কৃষিবীমা হতে পারে এতে একটি উৎসাহব্যঞ্জক সংযোজন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং ঋণের চক্র থেকে কৃষকদের বের করে আনতে কৃষি খাতকে বীমার আওতায় নিয়ে আসার বিকল্প নেই। কৃষিকে বীমার আওতায় আনতে পারলে প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষতির চাপ কমে যাবে। কৃষক সমাজ ঋণের চক্র থেকে বের হয়ে আসবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এমন আগ্রহ প্রকাশ করে রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বীমা করপোরেশনের মাধ্যমে কৃষি বীমা চালুর কথা বলেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে আর প্রক্রিয়াটি এগুলোই। কৃষি খাতকে বীমার আওতায় আনা হলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং কৃষকরা ঋণের চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবেন। বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠানও এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে পারেন। সামাজিক দায়িত্বশীলতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সংকটাপন্ন হাওর কৃষিকে বাঁচাতে হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে হাওর অঞ্চলবাসীর অবদান বিবেচনায় নিতে হবে। বীমার মাধ্যমে বিদ্যমান সুবিধা পেলে কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। বর্তমান সরকার বীমা খাতের উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণে গুরুত্ব দিয়েছে। কৃষি বীমা চালু হলে এই খাত আরো প্রসারিত ও গণমুখী হবে। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ জোরালো হবে। কৃষি খাত কর্মসংস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র্যবিমোচনে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু অকাল বন্যা, অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ দেশে বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে ফসলহানি ও অর্থনীতির ক্ষতি এক নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে কৃষকরা তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। তখনই কৃষক পরিবারে নেমে আসে দুর্যোগ। দরিদ্র কৃষকরা মহাজনী সুদে কৃষিতে বিনিয়োগ করেন। দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অনেকে ফসল উৎপাদন করেন, মেয়ের বিয়ে দেন, ছেলের লেখাপড়া করান। আশা থাকে, ফসল তুলে সব পরিশোধ করবেন। আর এই কষ্টার্জিত ফসল যখন চোখের সামনেই তলিয়ে যায়, ধ্বংস হয় তখন বিকল্প কিছুই থাকে না অসহায় কৃষকের। দুর্যোগ বেশিরভাগ সময় কৃষকদের ঋণের দুষ্টুচক্রে আটকে পড়তে বাধ্য করে। কোনো জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতা ও নীতিমালা না থাকায় দিশেহারা কৃষক আরো অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় মধ্যসত্বভোগী ফড়িয়া ও দালালদের কাছে। তাই দরিদ্র মানুষের জন্য একটি সঠিক ও বাস্তবসম্মত ঋণ কৌশলও প্রণয়ন জরুরি। কৃষি ঋণ প্রাপ্তি থেকে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন কলা-কৌশলে কৃষকদের দূরে ঠেলে দিচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন এনজিও ও মহাজনী সুদের উপর নির্ভর করে সর্বস্ব হারাচ্ছে। এভাবে একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কৃষকদের পুঞ্জীভূত সমস্যা অনুধাবন করে এর টেকসই সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশের কৃষি বহুবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই খাতকে শুধু ভর্তুকি দিয়ে জাগ্রত রাখা যাবে না। কৃষি অর্থনীতি সরব না থাকলে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা ভাব হারাবে এটাই বাস্তবতা। বাংলাদেশের মতো দেশ অনেকাংশে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। এখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানির সম্ভাবনা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কৃষকরা দেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখে। এই খাতের ওপর মৎস্য, প্রাণিস¤পদ অনেক কিছু নির্ভরশীল। বর্তমানে হাওর অঞ্চলে যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে, তা কখনোই একটি মধ্য আয়ের দেশের চিত্র হতে পারে না। মানুষকে জাগাতে হবে। মানুষকে বাঁচাতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত, দূরদর্শী পরিকল্পনা আর জীবনমুখী মানবিক চিন্তাভাবনা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কৃষকের সবর্স্ব কেড়ে নিচ্ছে। জীবন যেন বৃত্তাবদ্ধ নীতি কৌশলের কাছে মার না খায়, তা এখন সময়ের দাবি। বিদ্যমান চ্যালেঞ্জের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কৃষি বীমা চালু করার এখনই উপযুক্ত সময়। এবারের হাওরের চিত্র আমাদের সেই বার্তাই পুনরায় দিচ্ছে। কৃষি বীমা বাস্তবায়নের জন্য সর্বোত্তম নীতি তৈরি করে বাংলাদেশের কৃষিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা জরুরি। কৃষক বাঁচলে, দেশ বাঁচবে। এর মর্মার্থ অনুধাবন করে কৃষকবান্ধব সরকারের কৃষিতে অর্জিত সাফল্য হাওর অঞ্চলে তলিয়ে যেতে পারে না। হাওর জেগে উঠুক প্রাণের কোলাহলে। মানবিক বাতাসে প্রতিধ্বনি হোক জীবনের গান। মানুষ ফিরে পাক স্বাভাবিক জীবন সেই ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com