দেশে বেকার সমস্যা সমাধানে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। সরকারও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছেন। এ বিষয়ের শুভদিক হচ্ছে শিল্প বিষয়ক কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত ‘স্কিলস অ্যান্ড ট্রেইনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট’ নামের প্রকল্পের আওতায় প্রতিবছর জাতীয় স্কিলস কম্পটিশনের আয়োজন করা হয়ে থাকে। গত তিন বছর ধরে এ আয়োজন চলছে। এই প্রতিযোগিতায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে থাকেন।
দক্ষতাবিহীন সনদভিত্তিক শিক্ষা, ব্যক্তি, পরিবার ও জাতির জন্য বোঝা তৈরি করে। তাই কারিগরিই হবে শিক্ষার মূলধারা। এ জন্যই সরকার ইতিমধ্যে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির হার দেশের মোট শিক্ষার্থীর ১ থেকে ১৪ শতাংশের ওপরে উন্নীত হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশকে কারিগরি শিক্ষার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই তথ্য খুবই আশাব্যঞ্জক। কারণ কারিগরি শিক্ষা ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ অপেক্ষাকৃত বেশি। তাই তাঁদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম।
২০১৩ সালের শ্রমশক্তির জরিপে দেখা যায়, ২০১০ থেকে ২০১৩ এই তিন বছরে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেকারত্বের হার কমেছে। কিন্তু একই সময়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে বেকারত্বের হার সাড়ে ৬ শতাংশ বেড়েছে। ২০১০ সালে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। আর ২০১৩ সালে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ। অতএব, শিক্ষিত যুব সমাজের বেকারত্বের হার কমাতে হলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্র্থীর সংখ্যা কমিয়ে তার নিচের পর্যায়ের কারিগরি শিক্ষার প্রতি তাঁদের আরো আকৃষ্ট করতে হবে। সেই দিক থেকে কারিগরি শিক্ষাকে শিক্ষার মূলধারায় পরিণত করতে সরকারি পরিকল্পনা অবশ্যই বাস্তবসম্মত করতে হবে। তা না হলে বিপুল সংখ্যক উচ্চশিক্ষিত লোকবলের শ্রমবাজারে চাহিদা আমাদের নেই। তাই তো প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণী বেকারের তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন।
নতুন প্রজন্মকে আধুনিক কারিগরি প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে এখন সময়ের দাবি। তা না হলে এরাই হয়ে উঠবে দেশের জন্য বড় বোঝা। কারিগরি শিক্ষাকে শিক্ষার মূলধারায় পরিণত করার পরিকল্পনা খুবই বাস্তবসম্মত এবং প্রয়োজনীয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে বাস্তববাদী চিন্তা শুরু করেছে তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তাতে করেই শিক্ষিত বেকারের বোঝা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে এবং দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।