সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্টদের যত ‘বুদ্ধি’, যত কৌশল তা সবই প্রয়োগ করছে হাওর রক্ষা বাঁধে। গত সোমবার দুপুরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগার মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, পিআইসির বদলে ঠিকাদারদের কাজ দিতে আগ্রহী পাউবো। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে পিআইসিকে প্রয়োজনীয় তহবিল না দেওয়ার কারণে তারা চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বাঁধের কাজ করানোর কারণে বাঁধের কাজ বিলম্ব হয়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে হাওর এডভোকেসি প্লাটফর্ম (হ্যাপ)।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্তারা বিভিন্ন কৌশলে হাওরপাড়ের কৃষকদের বোকা বানিয়ে ধোঁকা দিয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। হাওরপাড়ের কৃষক এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে পিআইসি গঠন করা হয় এবং তারা এলাকার জনসাধারণের কাছে জবাবদিহিতায় থাকে। কিন্তু পিআইসিকে কেন বাঁধ নির্মাণে সময়মতো বরাদ্দ দেয়া হয় না। তারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমেই পানি উন্নয়নের দুর্নীতিবাজ কিছু কর্তা মোটা অংকের টাকা দাবি করে থাকে। এ নিয়ে পিআইসি’র লোকজন এবং পাউবো’র মধ্যে বাগড়া লেগেই থাকে। স্থানীয় লোক হিসেবে তাদের ফসল রক্ষা বাঁধ মেরামত নির্মাণ করতেই হয়। হাওর বাঁধ শুরুতে যেমন ঠিকাদারদের খোঁজে পাওয়া যায় না, তেমনি পাউবো’র কর্মকর্তারাও সে সময় উধাও হয়ে যান। তার জন্যই নতুন প্রস্তাব পিআইসি’র কাজগুলো ঠিকাদারদেরকে দিতে উৎসাহী।
সংবাদ সম্মেলনে হ্যাপ নেতৃবৃন্দ বলেন, এক সময় সুনামগঞ্জ হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যেত। বর্তমানে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেলেও বাঁধ আর নির্মাণ হয় না। প্রতি বছর এতো অল্প সময়ে বিপুল অর্থের বরাদ্দের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
হাওর এডভোকেসি প্লাটফর্ম (হ্যাপ) অভিযোগ করে, ২০০১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৭ বার সুনামগঞ্জের কৃষকরা ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। হ্যাপের নেতৃবৃন্দ সুনামগঞ্জ জেলার হালির হাওর ও ধারাম হাওর পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনে দেখা গেছে, মাত্র ৪০ ভাগের উপর কাজ হয়নি। ২৮ ফেব্রুয়ারি ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্নের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ১২টি বাঁধের কাজ শুরুই করতে পারেনি পাউবো।
সরকার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের জন্য এবার প্রায় ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু সে টাকার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না, এটাই সত্য। হাওর পরিদর্শনের বর্ণনাটা সাংবাদিকদের সম্মুখে হ্যাপের নেতৃবৃন্দ এভাবেই তুলে ধরেছেন।
পিআইসি’র বদলে ঠিকাদারদের কাজ দিতে আগ্রহী পানি উন্নয়ন বোর্ড তার একমাত্র কারণই হচ্ছে, পিআইসি’র ফসল রক্ষায় যে বরাদ্দ আসে তাও যাতে ঠিকাদার ও অসাধু কর্মকর্তারা লুটেপুটে নিয়ে যেতে পারে সে কাজটাই করার কৌশল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্তা ও ঠিকাদার প্রতিটি বছর জোট বেঁধে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়, যার ফলে হাওরের বোরো ফসল তুলতে না পারায় সারাটা বছর হতাশায় আর ঋণের বোঝা টানতে হয় কৃষকদের। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।