বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জন্মভিটা দিরাইয়ে অনুষ্ঠিত শোকসভায় বক্তারা বলেছেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন সংসদীয় গণতন্ত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি সংসদ অধিবেশনে না থাকলে মনে হতো পার্লামেন্টে আলো নাই। তিনি কথা বললে সংসদে প্রাণ থাকতো, না হলে সংসদকে নিষ্প্রাণ। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও ইতিহাসের এক অধ্যায়ের নাম সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। এই জননেতা জনতার কাছে চির অমর হয়ে থাকবেন।
বুধবার বিকেলে দিরাই বিএডিসি মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত শোকসভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। দুপুর আড়াইটায় শুরু হওয়া শোকসভা শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। শোকসভায় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্ত ও পুত্র সৌমেন সেনগুপ্ত বক্তব্য রাখেন।
দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আছাব উদ্দিন সরদার ও সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সোহেল তালুকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী শামছুল হক টুকু এমপি, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিক, ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি, মজিদ খান এমপি, অ্যাডভোকেট শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী এমপি, শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি, সাবেক সচিব এম এইচ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন, অ্যাডভোকেট শামীমা শাহরিয়ার, দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার, দিরাই পৌরসভার মেয়র মোশাররফ মিয়া, সিলেট জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম, ভাষা রেহনুমা প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন কথার যাদুকর। তিনি বলেন, অনেক সাধনার পর আমাদের জীবনে একজন সুরঞ্জিত এসেছিলেন। একজন সুরঞ্জিতের জন্য আমাদের এখন হাজার বছর অপেক্ষা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, সবাই মানুষ হতে পারে, কিন্তু সকলের হতে পারেনা। সুরঞ্জিত সকলের হতে পেরেছিলেন। তিনি সংসদীয় রাজনীতির ওই বরপুত্র পার্লামেন্টে না থাকলে মনে হতো পার্লামেন্টে আলো নাই। তিনি না থাকলে পার্লামেন্ট জমতোনা। এই কারণেই বহু আগেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তাকে ¯েœহ করে সংসদে কথা বলার সুযোগ দিতেন। ওই সময়ই বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন এই ছেলে একদিন বাংলাদেশ কাঁপাবে। বাংলাদেশকে তিনি কাঁপিয়েছেন কথার যাদুতে।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামছুল হক টুকু বলেন, শুধু দিরাই-শাল্লার নয়, সুরঞ্জিত ছিলেন বাঙালি জাতির। তিনি গণতান্ত্রিক বি শ্বের নেতা ছিলেন। নিজের যোগ্যতার বাগ্মিতায় তিনি নিজেই নিজেকে সুউচ্চ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলেন। তিনি সংসদীয় রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে বেঁচে থাকবেন। দল নয় নিজেই প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। প্রতিদিন ছন্দে ছন্দে জনতাকে মাতিয়ে রাখতেন। জনতার কাছে সুরঞ্জিত সেন অমর হয়ে আছেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এই ভাটি এলাকা থেকে উঠে গিয়ে রাজনীতির শীর্ষ শিখরে ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই মানুষটি কেবল রাজনীতিই করে গেছেন।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পুত্র সৌমেন সেনগুপ্ত বলেন, বাবা আজীবন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে গেছেন। আমরাও তার সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই। বাবা থাকতে যেভাবে আমাদের বাড়ি আপনাদের জন্য খোলা থাকতো আমরাও আজীবন সেভাবেই রাখব।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহধর্মীণি ড. জয়া সেনগুপ্ত বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নিজের পরিবারের চেয়েও দিরাই-শাল্লার মানুষকে বেশি ভালবাসতেন। ছোটবেলা মা-বাবা হারানো সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে আপনারই বিখ্যাত রাজনীতিবিদ বানিয়েছিলেন। তার মরদেহ হাজার হাজার মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রমাণ করে যে এলাকার মানুষ তাঁকে কত ভালবাসে। জয়া সেন আরো বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্মৃতি ধরে রাখতে আমি আপনাদের হয়ে কাজ করে যেতে চাই।
শোকসভায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নির্বাচনী এলাকা দিরাই-শাল্লাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যেও হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। কয়েক হাজার মোটর সাইকেলে করে দিরাই-মদনপুর সড়ক থেকে জয়া সেনগুপ্তকে বরণ করেন নেতাকর্মীরা।