দেশে আশঙ্কাজনক হারে কৃষি ঋণে খেলাপি বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট তথ্য থেকে জানা যায়, ব্যাংকগুলো চলতি অর্থ বছরের প্রথম সাত মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে জানুয়ারি কৃষিখাতে ১২ হাজার ১৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। যদিও চলতি অর্থবছরের ব্যাংকগুলো কৃষিখাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের ৭ মাসে কৃষিখাতে বিতরণ হওয়া ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। ওই হিসেবে কৃষি খাতে বিতরণ হওয়া মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৫২ শতাংশ খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। যা আগের অর্থ বছরের একই সময় ছিল ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা না থাকার পরও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্বিগ্ন। কৃষিখাতের সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে। ওই ব্যাংকের ঋণ স্থিতির পরিমাণ ১৩ হাজার ৯৫১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা যা কৃষিখাতে মোট খেলাপি ঋণের ২০ শতাংশ। তাছাড়া কৃষিখাতে সোনালী ব্যাংক ১ হাজার ২৫৯ কোটি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ৬০৫ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকে ১৯৪ কোটি, জনতা ব্যাংকে ২৬২ কোটি এবং রূপালী ব্যাংকে ২৯ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি রয়েছে। আর কৃষিখাতে বেসরকারি ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১২ কোটি টাকা যা গত বছরের একই সময় ছিল ৮০ কোটি টাকা।
সারসহ কৃষি সরঞ্জামাদির দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা ঋণ ছাড়া কৃষিকাজ করতে পারছেন না। তাই আমন চাষাবাদের সময় ব্যাংকগুলো কৃষকের বেশি পরিমাণ অর্থ ছাড় করেছে। তাতে কৃষিঋণের পরিমাণ ওই সময়ে বেড়েছে। বোরের মৌসুম শুরু হওয়ায় কৃষিঋণ বিতরণ আরো বেড়েছে।
কৃষিঋণ বিতরণে ব্যাংক আগ্রহ দেখিয়ে ঋণ বিতরণ করলেও ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলো তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি। কেননা বর্তমান পরিবেশে কৃষিখাতে খেলাপি বাড়ার কোনো কারণ নেই। কারণ এ সময়ে দেশে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেই। নেই রাজনৈতিক অস্থিরতা, তারপরও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। মূলত ব্যাংকারদের ঋণ আদায় তৎপরতা কমে যাওয়াতেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতে কৃষিতে বকেয়া আদায় জোরদার করতে হবে। তা না হলে কৃষিতে খেলাপি ঋণের সংখ্যা বেড়েই চলবে।