দেশ স্বাধীনের পর একাধিকবার বলা হয়েছে, আমাদের দেশে কয়েক বছরের মধ্যে প্রারম্ভিক শিক্ষা সার্বজনীন, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হবে। সার্বজনীন প্রারম্ভিক শিক্ষার লক্ষ্য পূরণের জন্য বর্তমান সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে রয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানামুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
২০১৭ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ৩৬ কোটি ১২ লক্ষ ৮২ হাজার বই প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য মধ্যাহ্নকালীন আহার, পোষাক, অবৈতনিক শিক্ষা, বিভিন্ন বৃত্তি, অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের নানা সুবিধা দিচ্ছে সরকার। নেয়া হয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প, শিক্ষামূলক ভ্রমণ, মেয়েদের জন্য সেল্ফডিফেন্স ট্রেনিং ইত্যাদি। এতো কিছুর পরও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা থেকে ঝরেপড়া থামছে না।
আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধ সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তার জন্য স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক এবং সচেতন নাগরিক সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গুরুত্বপূর্ণ পালন করতে হবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। প্রথম শ্রেণি থেকেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গড়ে তুলতে হবে নিবিড় আত্মিক সম্পর্ক। কিন্তু শিক্ষার্থী-শিক্ষকের মধ্যে দেখা যায় বিস্তর ব্যবধান। কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বাদ দিলে বেশির ভাগের সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের দূরত্ব রয়েছে। ফলে সেখানে কাজ করে ভয়, ভীতি, অনাবশ্যক দুশ্চিন্তা, শ্রেণিকক্ষে তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। তাছাড়া শ্রেণিকক্ষের পাঠদান হতে হবে খুব আগ্রহ সৃষ্টিকারী। প্রথম শ্রেণির শিশুদের নানারকম ছড়া শেখানো, সুন্দর সুন্দর গল্প বলার মধ্যদিয়ে পাঠে আগ্রহী করে তোলা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়িত্ব।
শিশুদের অন্তর্নিহিত গুণাবলির বিকাশ ঘটানোই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য এবং একে রূপ দিতে তার ভিতরের প্রতিভাকে বের করতে হলে একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সহপাঠ্যমিক কার্যাবলি। শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস, শৃঙ্খলাপরায়ণতা, সহনশীলতা, নীতিবোধ, দায়বদ্ধতা জাগ্রত করতে হবে। তার দৃষ্টিভঙ্গির রূপায়ন শুধু শেখা আর খাতায় তা উগড়ে দেয়ার মাধ্যমেই সম্পন্ন হয় না, এর জন্য চাই দীর্ঘ অনুশীলন।
জাতি গঠনের মূল কারিগর শিক্ষকদের কাছে জাতির প্রত্যাশার শেষ নেই। শিশুদের ঝরেপড়া রোধে সরকারের পাশাপাশি শিক্ষকদের গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধ সম্ভব হবে।