ভুল-ভ্রান্তি, ত্রুটি-বিচ্যুতি ও আপত্তিকর নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এ বছরের বিনামূল্যের অনেক পাঠ্যবই। এই ভুলে ভরা বই দিয়েই চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। যেমন প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে বর্ণ পরিচয়ে ‘ও’ তে ‘ওড়না চাই’ বিষয় নিয়ে বিতর্ক চলছে দেশজুড়ে। এখানে জেন্ডারের বিষয়টি লঙ্ঘিত হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। তাছাড়া ওড়না কেন প্রয়োজন, একজন শিক্ষার্থী জানতে চাইলে শিক্ষক এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন না। বানান ভুল নিয়েও চলছে আলোচনা-সমালোচনা। পঞ্চম শ্রেণির বইয়ে ‘ঘোষণা’ বানান ‘ঘোষনা ‘সমুদ্র’ বানান ‘সমুদ’ লেখা হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় ইংরেজি নীতিবাক্য লেখা হয়েছে ভুল বানানে। যেমন কাউকে কষ্ট দিও না-র ইংরেজি লেখা হয়েছে, DO NOT HEART ANY BODY। প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ছবি দিয়ে দেখানো হয়েছে ছাগল নাকি গাছে ওঠে আম খায়। তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে কুসুম কুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’ পঙ্ক্তির বদলে লেখা হয়েছে ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে’। কবিতাটির চতুর্থ লাইনে ‘মানুষ হইতে হবেÑ এই যার পণ’-এর ‘হইতে’ শব্দটিকে পাল্টে লেখা হয়েছে ‘হতেই’। নবম লাইনে ‘সে ছেলে কে চায় বল কথায়-কথায়’ এর ‘চায়’ শব্দটির বদলে লেখা হয়েছে ‘চাই’। পঞ্চদশ লাইনে ‘মনে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান’ এর ‘খাট’ এর বদলে লেখা হয়েছে ‘খাটো’। তাছাড়া কবিতাটি একাদশ থেকে চতুর্দশ লাইন উধাও হয়ে গেছে। অষ্টম শ্রেণির গল্পের বই আনন্দপাঠ নিয়েও প্রশ্নের শেষ নাই। বইটির সাতটি গল্পের সব ক’টিই বিদেশি লেখকদের লেখার অনুবাদ। তাছাড়া একটিও মৌলিক গল্প নেই।
প্রাথমিক বিদ্যালয়, যেখানে শিক্ষার হাতেকড়ি হয়ে থাকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক একটা শিশুর এবং শুরুটাই যদি হয় ভুল তথ্য দিয়ে তাহলে সে জীবন গড়ার ক্ষেত্রে কতটুকু এগিয়ে যেতে পারবে তা নিয়ে অবশ্যই আমাদের ভাবতে হবে। ইতোমধ্যে ভুলের কারণ খুঁজতে পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। আমরা আশাকরি এই পর্যালোচনা কমিটি এসব ভুলের সঠিক কারণসমূহ উদ্ঘাটন করবে এবং শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষা গ্রহণে সঠিক পথ বেঁচে নেবে।