মাহমুদুর রহমান তারেক ::
প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন সুনামগঞ্জের মানুষ। রোববার ভোর রাতে অভিজ্ঞ এই পার্লামেন্টারিয়ানের মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছালে দলের ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দিরাইয়ে সুরঞ্জিতের বাড়িতে ভিড় করেন। সকাল থেকেই সেখানে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আসতে থাকেন। এসময় সুরঞ্জিতের স্মৃতির কথা স্মরণ করে অনেককেই কাঁদতে দেখা যায়। দলের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগ। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের এমপি।
আজ সোমবার সকাল ১০টায় সিলেটে প্রবীণ এই নেতার প্রতি প্রদ্ধা নিবেদনের পর মরদেহ প্রথমে জেলা শহরে সুনামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ থেকে শাল্লা উপজেলায় এবং পরে বিকেল ৩টায় তাঁর জন্মস্থান দিরাইয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর কথা শোনে রোববার দুপুরে তার বাসভবনে আসনে স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মী নারায়ণ দাস। তিনি বলেন, “সেন দাদা আমাদের এলাকার বার বার নির্বাচিত এমপি ছিলেন। সব মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন তিনি। তার মৃত্যু মেনে নিতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে।”
সুরঞ্জিত সেনের মৃত্যুর খবর শোনে আসা ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী বলেন, এলাকার মানুষকে ভালোবাসতেন বলেই শেষ বয়সে অসুস্থ শরীর নিয়ে দিরাই-শাল্লা চলে আসতেন তিনি। জাতীয় নেতা হলেও তাঁর চিন্তা-চেতনায় ছিল হাওর এলাকার মানুষ আর মানুষের উন্নয়ন।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জন্য দিরাই-শাল্লার মন্দিরগুলোতে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের উপজেলা সহ-সভাপতি সিরাজ-উদ-দৌলা তালুকদার। তিনি বলেন, “দাদা শুধু সুনামগঞ্জ বা সিলেটের নেতা ছিলেন না, ছিলেন জাতীয় নেতা। এমন নেতা আর সৃষ্টি হবে না। তাঁর মৃত্যুতে দেশের রাজনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, যা পূরণ হওয়ার নয়।”
আরেক সহ-সভাপতি সুহেল আহমদ ছইল জানান, চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সুরঞ্জিত ছিলেন সবার ছোট। তিন ভাই আগেই মারা গেছেন। একমাত্র বোন কলকাতায় বসবাস করছেন। “আমাদের নেতার মৃত্যুতে শুধু দলীয় নেতাকর্মীরা নয় সব শ্রেণিপেশার মানুষ শোকস্তব্ধ। সাধারণ মানুষের কান্না প্রমাণ করে, তিনি কত জনপ্রিয় ছিলেন।”
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন রায় বলেন, গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করা সুরঞ্জিত ব্যক্তি জীবনেও অসাম্প্রদায়িকতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। “তার মতো রাজনীতিকের মৃত্যুতে দিরাই-শাল্লার প্রকৃতিও নীরব হয়ে গেছে। তিনি শুধু সুনামগঞ্জের নেতা না, জাতীয় নেতা হিসেবে দেশের গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি যা করেছেন, তা ব্যাখ্যা করা যাবে না।”
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আছাব উদ্দিন সরদার বলেন, “সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে আমরা অভিভাবক হারিয়েছি। আমরা দিরাই-শাল্লার মানুষ শোকে পাথর হয়ে গেছি। তার মৃত্যুতে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।”
জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন বলেন, ছোটবেলা থেকেই উনাকে রাজনীতি করতে দেখেছি, তৃণমূল থেকে কেন্দ্র, কেন্দ্র থেকে আন্তর্জাতিক মহলে জনপ্রিয় ছিলেন ভাটিবাংলার এই মানুষটি। তাঁর মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে দেশের।
জেলা আ.লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আজীবন বন্ধুবৎসল ছিলেন। তিনি দেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং আমাদের সুনামগঞ্জের সম্পদ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশের মানুষ একজন গুণী মানুষকে হারিয়েছে।
সত্তরের প্রাদেশিক পরিষদে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন অন্যতম কনিষ্ঠ সদস্য, স্বাধীন দেশের প্রথম সংসদসহ চার দশকের প্রায় সব সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ভোরে জননেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যু হয়।