স্টাফ রিপোর্টার ::
শহরের ওয়েজখালি এলাকার আফরোজা বানু ও তার বোন শহরে এসেছেন কেনা-কাটা করতে। আফরোজার কোলে তার দুই বছর বয়সী সন্তান। বোরকাপরা আফরোজা বানু আলফাত স্কয়ার ঘেঁষা গণেশ ট্রেডার্সের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তার সামনেই ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সম্মেলনের মঞ্চে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার বক্তব্য রাখছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি লাকী আক্তার। আফরোজা আর ও তার বোন তন্ময় হয়ে শোনেন লাকীর বক্তব্য। বক্তব্য শোনার সময় ওই দুই বোন অপলক তাকিয়ে ছিলেন লাকীর দিকে। বক্তব্য শেষ করে তারা ওই এলাকা ত্যাগ করেন।
শনিবার সন্ধ্যায় এভাবেই জেলা ছাত্র ইউনিয়নের ২৩তম সম্মেলনে অনেক শ্রোতা লাকী আক্তারের বক্তব্য শোনেন তন্ময় হয়ে। লাকী আক্তার গঠনমূলক কথার যাদুতে দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক তুলে ধরে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বক্তব্য রাখেন। তাঁর বক্তব্যের সময় শহরের প্রাণকেন্দ্র ও ব্যস্ত এলাকা আলফাত স্কয়ারে ছিল পিনপতন নীরবতা। গত ১৫ বছরের ইতিহাসে ছাত্র ইউনিয়ন সুনামগঞ্জ জেলা সংসদ সফল ও উৎসবমুখর সম্মেলন সম্পন্ন করেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক মহল।
শুধু আফরোজা বানুই নয় সম্মেলনে ছুটে আসেন ভাতৃপ্রতীম অনেক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের লোকজন। লাকীর পাশাপাশি ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী মাহমুদা খা, শারমিন আক্তার পপি ও কাজী রিতার বক্তব্যও শোনেন শ্রোতাবৃন্দ।
লাকী আক্তার তার গঠনমূলক বক্তব্যে ছাত্র ইউনিয়নের বর্ণাঢ্য ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমূলক বিষয় অন্তর্ভুক্তিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে এসব প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তক থেকে হেফাজতি পরামর্শে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ও রণেশ দাশগুপ্তের ‘মাল্যদান গল্প’ বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষা থেকে দূরে রাখতেই এই শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর ষড়যন্ত্র চলছে।
লাকী আক্তার তার বক্তব্যে আরো বলেন, জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কোন বৈষম্য নয়, দেশে ধনী গরিবের জন্য একই শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। বাংলাদেশকে পরাজিত হতে দেওয়া যাবেনা।
‘স্লোগান কন্যা’ লাকী আক্তার গণজাগরণ মঞ্চের উত্তাল সময়ে দেশের তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করেছিলেন আগুনঝরা স্লোগানে। সেই স্লোগানকন্যা এখন বাংলাদেশের প্রগতিশীল ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি। তার স্লোগানে প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে রাজপথে ‘বারুদ’ হয়ে ফুটেছিল। এখন এই লাকীর বক্তব্যেও উজ্জীবিত হয় প্রজন্ম। সুনামগঞ্জের প্রজন্মও তার বক্তব্যে আবারও উজ্জীবিত হলো। তার আগুনঝরা বক্তব্যে জাতীয় মুক্তি ও আকাক্সক্ষার প্রতিফলন প্রতিধ্বনিত হয়েছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।