বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। হাওর-ভাটির রাজনীতির এই ভূমিপুত্র প্রতিকূল উজান বেয়ে রাজনীতির শীর্ষে আরোহণ করেছিলেন। হয়েছিলেন জাতীয় নেতা। একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ হিসেবে দেশ-বিদেশে প্রাজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনসহ এদেশের স্বাধীনতাপরবর্তী প্রতিটি গণআন্দোলনে এক অগ্রপথিক নেতা ছিলেন তিনি। রাজনীতির মঞ্চে তার যাদুকরি কথায় মোহাবিষ্ট হতো সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে জাতীয় ও সাংবিধানিক সংকটকালে তার বক্তব্য হতো মুক্তির বার্তা। হাস্যরসে কঠিন বিষয়কেও সহজ ও কোমলভাবে উপস্থাপন করে এদেশের মানুষের মন জয় করেছিলেন সংসদীয় রাজনীতির এই নক্ষত্রপুরুষ। যাত্রা মঞ্চ থেকে রাজনীতির মঞ্চে যাদুকরী কথার মালা গেঁথে সুভাষ ছড়াতেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। উত্তাল সত্তরে এই ক্যারিশমাটিক বক্তব্যেই আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী ও বৃটিশ ভারতের মন্ত্রী অক্ষয় মিনিস্টারকে হারিয়ে হারিয়ে রাজনীতির মঞ্চে যে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছেন তা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বহাল ছিল। নতুন প্রজন্ম প্রভাববিস্তারকারী এই সুবক্তা, মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতির পথের এই সৈনিককে হারিয়ে এখন ব্যথিত। ভাটির সন্তান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেওয়া সুরঞ্জিতের জন্য অশ্রু ফেলছেন সাধারণ জনতা।
এই জননেতাকে হারিয়ে বিলাপ করছে হাওর-ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জ। তার রাজনৈতিক শিষ্য, ভক্ত, কর্মী, অনুরাগী, অনুসারী, সহযোদ্ধারা এখন স্মৃতির ঝাঁপি খুলে অশ্রুসজল নয়নে বাকহারা। অনেক রাজনৈতিক অনুরাগী শেষ বয়সে তার সঙ্গে রাজনৈতিক অবিচার করা হয়েছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বিরোধীদলীয় সংগঠনের নেতারা যারা তাঁর ধারালো ও গঠনমূলক বাক্যবাণে বিদ্ধ হতেন তারাও শোকে মুহ্যমান। সবাই অধীর আগ্রহে আছেন প্রিয় নেতাকে শেষ দেখার তরে। চোখের জলে ফুলেল শ্রদ্ধায় বিদায় জানাতে চান নেতাকে। শোকের ছায়া নেমে আসা ভাটির জনপদের লাখো সাধারণ মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানাতে প্রহর গুণছেন। প্রহর গুণছেন তার নির্বাচনী এলাকা দিরাই-শাল্লার আপামর মানুষ। তারা বুকপকেটে কালোব্যাজ ধারণ করে নেতার শোকে অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছেন। তার শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কালনীনদীঘেরা জনপদ দিরাইয়ে আজ সোমবার বিকেলে হবে শেষকৃত্য। এর আগে সিলেট হয়ে জেলা শহর সুনামগঞ্জে আসবে মরদেহ। সেখানে সর্বস্তরের জনতা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে দিরাই ও শাল্লায় শ্রদ্ধা জানাবেন নির্বাচনী এলাকার আপামর মানুষ।
লেখক-প্রভাষক এনামুল কবির বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন এক বর্ণাঢ্য রাজনীতিক; যৌবনে তাঁর প্রতিযোগী ছিলেন কেবল তিনি নিজেই। কার্যত তিনি ছিলেন তাঁর নিজের মতোই; সময়ের এক গর্বিত সন্তান এবং সন্দেহাতীত- অনন্য ব্যক্তি সত্তার অধিকারী। আজ তিনি নেই; কিন্তু বাংলাদেশ আর আমাদের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাস তাকে কোনদিন ভুলে যাবে না।