ফেসবুকে লেখা মানে নতুন করে ছাত্র হয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সামিল। বহু কষ্ট করে মাথা খাটিয়ে একটা লেখা ফেসবুকে আসার পর হাজার ফেসবুক বন্ধুদের সামনে উপস্থাপনের পর জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, শিক্ষিত বন্ধুরা নানা মন্তব্য শুরু করেন, ভুল হলে তো রক্ষা নাই। শত চোখ ফাঁকি দেওয়া যায়, হাজার চোখ ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ভুল হলে সাথে সাথেই তীর্যক বাক্যবাণে জর্জরিত করে তুলেন। আর ভালো লাগলে কেউ কেউ মন্তব্য করেন। সারাদিন পর্যবেক্ষণের পর লেখাটি যায় সুনামকণ্ঠের স¤পাদক বাবু বিজন সেন রায়ের টেবিলে। তিনি পড়ে সন্তুষ্ট হলে ছাপার জন্য তার পত্রিকায় দেন। অনেক সময় স¤পাদকের কাঁচিও চালান লেখার উপর। পরদিন ছাপা হয় পত্রিকায়। যারা ফেসবুক ব্যবহারে অভ্যস্ত নন তারা সাধারণত পত্রিকার মাধ্যমে লেখাগুলো পাঠ করে থাকেন।
পানের দোকানদার, বিভিন্ন দোকানের কর্মচারী, সেলুনের কর্মী হতে শুরু করে সমাজের নানা স্তরের পেশাজীবীরা আমার পাঠক। তাছাড়াও রয়েছেন আমার মা-বোনেরা। তারা দুপুরে খাওয়ার পরে অনেকেই দিবানিদ্রার আগে আমার এই লেখাটি পড়ে থাকেন। প্রথমদিকে বুদ্ধিজীবীরা (দাড়ি, কমা) বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করতেন। তখন আমি তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলি আমি একজন অর্ধশিক্ষিত মানুষ। দয়া করে আপনারা আমার লেখায় সাহিত্য মূল্য খুঁজবেন না। আপনাদের জন্য রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল, সমরেশ মজুমদার, শেক্সপিয়র, জাফর ইকবাল প্রমুখ।
আমি আগেই বলেছি, আমি অসুস্থ মানুষ। খেয়ালের বশে সময় কাটানোর জন্য ঘরে বসে এই লেখাগুলো লিখছি এবং প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। আমি মনে করি আমার লেখার তথ্যগত কোনো ভুল নেই। তথ্যগত ভুল থাকলে পাঠকদের কাছে আবেদন করে রেখেছি, আমার আই.ডি পোস্টে অথবা মোবাইলে জানিয়ে দিলে আমি সাথে সাথে ভুল সংশোধনের ব্যবস্থা নেই। আমি সবসময় বিশ্বাস করি নিজে সুখে থাকার মধ্যে শান্তি নেই। অন্যের জন্য, সমাজের জন্য, কতটা করতে পারলাম, তাতেই আমার জীবন সার্থক হবে। আমি জন্মেছি এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে। জীবন ছিল সচ্ছল, কোনোদিন কোনোকিছুর অভাব বোধ করিনি। তবে বিলাসিতা একেবারেই ছিলনা।
স্কুলে যাওয়ার জন্য দুটি শার্ট ও একটি পায়জামা ছিল। স্কুল থেকে এসে পড়ার জন্য একটি শার্ট ও একটি পায়জামা ছিল। বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য একটি শার্ট ও একটি প্যান্ট ছিল। জুতা বলতে একজোড়া বাটার স্যান্ডেল ছিল যা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরে যেতাম। এই ছিল সম্বল।
নতুন প্রজন্মের বন্ধুরা, মনে হয় তোমরা হাসছো। কিন্তু আমার যা ছিল তা কিন্তু অনেকেরই ছিল না। আজ পেছনে ফিরে তাকালে অনুভব করি আমি যা পেয়েছি তা আমার মত মানুষের জন্য যথেষ্ট। যা পেয়েছি তা দিয়ে তৃপ্ত হতে আজ আমরা ভুলে গেছি। আমাদের আরো চাইÑ অর্থ, বিত্ত। ক্ষমতার আকাক্সক্ষা যেন সীমাহীন।
সমাজে চলছে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ভয়াবহ একটি ভোগবাদী সমাজ আমাদের চারপাশে। যারা সমাজে দরিদ্র অংশ, তাদের যদি আমি আমার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারি তাহলে এটাই হবে চরম পাওয়া।
আমাকে সত্যের পথে থাকতে নিরন্তর প্রেরণা জুগিয়েছে আমার স্ত্রী, কন্যা ও সন্তানেরা। জীবনে চলার পথে আমাকে দোয়া করবেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আপনাদের বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করতে পারি। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ আমার জীবনের একমাত্র তৃপ্তি। যদি বেঁচে থাকি তাহলে আমার মনের লালিত স্বপ্ন একটা ভিন্নধর্মী স্কুল প্রতিষ্ঠা করা যা প্রচলিত ধারার সিলেবাস হতে আলাদা হবে। যেখান থেকে মানুষের মত মানুষ তৈরি করা যায়।
পরিশেষে, আসুন আমাদের যা কিছু আছে তা নিয়ে আমরা শান্তিতে থাকি, সুখে থাকি।