গত কয়েক দশকে বড় ধরনের সাফল্য এসেছে দেশের কৃষি খাতে। জমির পরিমাণ কমলেও বেড়েছে উৎপাদনশীলতা। এরই মধ্যে প্রধান শস্যে স্বয়ংস¤পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তা সত্ত্বেও বর্তমানে প্রয়োজনীয় শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে কৃষি খাতে।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়Ñ সদর উপজেলার দেখার হাওরপাড়ে অবস্থিত হালুয়ারগাঁও গ্রামে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাওরের ক্ষেতে গুন টেনে ধান রোপণ কাজে স্থানীয় বিদ্যালয়ের ৫ম থেকে ১০ম শ্রেণিতে পড়–য়া শিশু-কিশোরেরা। একমাত্র ফসলের বোরো জমি যাতে পতিত না থাকে সেকারণে তারা স্কুল ছেড়ে, ঘর ছেড়ে হাওরের ক্ষেতে নেমেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে সারাদিন ধান লাগাচ্ছেন। শ্রমিক সংকটের সময়ে একে অন্যের ক্ষেতে ধান লাগাতে সহযোগিতাও করছেন।
সুনামগঞ্জের প্রায় দেড় শতাধিক হাওরে এখন বোরো ধান লাগানোর ধুম চলছে। পৌষ মাসের শুরু থেকে শুরু হয়েছে। ভরা পৌষ মাস হাওরে ধান লাগাবেন কৃষকরা। কিন্তু কৃষি কাজে শ্রমিক সংকটের কারণে ধান রোপণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা।
নিরক্ষর বা স্বল্পশিক্ষিত মানুষেরা গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হওয়ায় কৃষি খাতে শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন কমছে। শ্রমিকের অভাবে চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষকরা। তাঁরা বেশির ভাগ কৃষি জমি হয়তো খালি ফেলে রাখছে কিংবা অন্য কাজে ব্যবহার করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বেও এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো এবং প্রক্রিয়াজাত শিল্প বিকাশের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়েছে। তাই বাংলাদেশেও এখন জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে পরিচর্যা, কাটা, মাড়াই ও বিপণনের বিভিন্ন ধাপে প্রযুক্তি আনতে হবে। কৃষি শ্রমিকের ঘাটতি মোকাবিলায় আধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে। পাশাপাশি জমি চাষ, রোপণ, ফসল কাটা, ধান মাড়াই থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে। জনশক্তি না পাওয়া গেলে আপাতত প্রযুক্তিকেই বিকল্প হিসেবে নিতে হবে বলে আমরা মনে করি।