নদী ভাঙন আমাদের দেশের নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের একটি নৈমিত্তিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সময় শুরু হয় ভাঙন। এই ভাঙনে বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষ হয় আশ্রয়হারা। বসতবাড়িসহ জীবনের সম্বলটুকু হারিয়ে নিঃস্ব মানুষের অসহায়ত্বের হাহাকার ঘুরেফিরে প্রতিবছরই দেখা যায়। নদী ভাঙন নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়, ভাঙনকবলিত এলাকায় সরকারি-বেসরকারি সাহায্য যায়। কিন্তু এর স্থায়ী সমাধান হয় না।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের খালিশাপাড়া এলাকায় ইটাখলা নদীর ভাঙন চরম আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও গ্রামীণ রাস্তা। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য গ্রামীণ রাস্তা। নদী ভাঙনে বসত বাড়ি হারিয়েছে অনেক পরিবার। যে কোন সময় নদী পাড়ের অন্যান্য স্থাপনা বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় শিবগঞ্জ বাজার থেকে ইটাখলা নদীর পার দিয়ে পাটকুড়া পর্যন্ত একটি গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে যুগযুগ ধরে খালিশাপাড়া, উলুকান্দি, বুধরাইল, মোরাদাবাদ, উলুছন্দ, বড় ফেছি, ছোট ফেছি, শেওরা, কিশোরপুর, সোনাতনপুর, ব্রাহ্মণগাঁও, তেঘরিয়া, সৈয়দপুর, বুরমপুরসহ ১৫ গ্রামের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের হাজারো জনতা যাতায়াত করেন। গ্রামীণ এ রাস্তাটি ভেঙে নদীতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ১৫ গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাছাড়া খালিশাপাড়া-উলুকান্দি জামে মসজিদের সীমানা দেয়ালসহ সামনের জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। মসজিদটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোন সময় মসজিদটি নদীতে তলিয়ে যেতে পারে।
আমাদের নদীমাতৃক দেশে নদী ভাঙনের ক্ষয়ক্ষতি সুদূর প্রসারী। দেশের আর্থ-সামাজিক, ভৌগোলিক ও পরিবেশগত পটভূমিতে নদী ভাঙন একটি চলমান সমস্যা। প্রতি বছর ফসলি জমি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। এর ফলে বছরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষজন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নদী ভাঙন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও এই দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব। ভাঙনকবলিত এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে যদি পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া হয়, তাহলে অনেকাংশেই ভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব। সেই সঙ্গে নদীতে প্রয়োজনীয় ড্রেজিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ধরে রাখা হলে তাও ভাঙন প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকতার সঙ্গে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।