দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতা যেমন বাঙালির শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি, তেমনি মুক্তিযোদ্ধারা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কারণেই বাঙালি জাতি পরাধীনতার জিঞ্জির ভেঙে স্বাধীন ভূখন্ডে বসবাস করতে পারছে। বিশ্ব দরবারে বাঙালি জাতি হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছে নিজস্ব পরিচয় ও লাল-সবুজের পতাকা। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ কখনো শোধ করার মতো নয়।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদে জানা যায়, দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের ঢালিয়া গ্রামের বাসিন্দা হাবিলদার আব্দুল মজিদ স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুবিধা পাওয়ার আশায় নয়, শেষ বয়সে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে মরতে চান হাবিলদার আব্দুল মজিদ এটাই তার আশা।
তিক্ত হলেও সত্য যে, মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনযাপনের এ দুরবস্থার জন্য বিগত সরকারগুলোও কম দায়ী নয়। যাঁদের জন্য এ মহান প্রাপ্তি, স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও কেন তাঁদের অসহায় জীবনযাপন করতে হবে। জীবন বিপন্ন করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ-মাতৃকার সম্মান বাঁচানো এবং স্বাধীনতা এনে দেয়ার এ মূল্য? হাবিলদার আব্দুল মজিদেরা কোনো সম্মাননার আশায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। ন্যায়ের পথে, মানবতার পক্ষে, নিজের জন্মভূমিকে রক্ষার তাগিদে, জীবন বিপন্ন হবে জেনেও পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। আব্দুল মজিদকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল রাষ্ট্রের অন্যতম পবিত্র দায়িত্ব। একজন হাবিলদার আব্দুল মজিদকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি না দেওয়ার বিষয়টি কখনো কাম্য হতে পারে না। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও আব্দুল মজিদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি না পাওয়ার এ সংবাদটি কিছুতেই স্বস্তিদায়ক নয়; বরং কিছুটা হলেও দায় এসে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বর্তমান সরকারের ওপর। আমরা আশা করি সরকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সামগ্রিক উন্নয়নে আরো যতœশীল হবেন।