দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কোচিং বাণিজ্য বিরূপ প্রভাব ফেলছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এই বাণিজ্যিক প্রবণতা। বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য দিন দিন কোচিংনির্ভরতা বেড়েই চলেছে। ভর্তির পরও কোচিং থেকে মুক্তি নেই। বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করেই শিক্ষার্থীদের ছুটতে হয় কোচিং সেন্টারে। শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও এখন কোচিংনির্ভর হয়ে পড়ছে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও শিক্ষার্থীদের প্রতি মনোযোগী হওয়ার চেয়ে কোচিং সেন্টারে মনোনিবেশ অনেক শিক্ষকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অভিভাবকদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। অথচ শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে মনোযোগী হলে অনেক শিক্ষার্থীকেই কোচিংনির্ভর হতে হতো না। অভিভাবকদেরও অতিরিক্ত অর্থ জোগান দিতে হতো না। একশ্রেণির শিক্ষকের অনৈতিক ও অর্থলিপ্সার কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের নানা উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে ওইসব শিক্ষকদের দায়িত্ববোধ, আন্তরিকতা ও নৈতিকতা নিয়ে। কোচিং বাণিজ্য বন্ধে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ আমলে নিচ্ছেন না তারা। কোচিং সেন্টারের নামে শিক্ষাবাণিজ্য নিয়ে গত কয়েক বছরে দেশের গণমাধ্যমে অনেক লেখালেখি এবং সরকারের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করার পরও কোচিং বাণিজ্য এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বারবার কোচিং বাণিজ্য ও গাইড বই বন্ধের কথা বললেও তা বন্ধ হচ্ছে না। শনিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিজিটাল মাদ্রাসা টেক্সটবুক এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, ‘কোচিং বাণিজ্য ও গাইড বই চলবে না। এটা শিক্ষা আইনেও অন্তর্ভুক্ত হবে। শিক্ষা আইন করতে বারবার বিভিন্নভাবে মতামত নেওয়া হয়েছে। বারবার এতে মত দেন আমাদের শিক্ষক, শিক্ষানুরাগী, জনগণ। আমরা তা গ্রহণ করি। এগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করি কথাবার্তা বলি, আবার নতুন সমস্যা আসে। এমন করতে করতে এটা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে আসছে।’
এক সময়ে মনে করা হতো, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নামমাত্র তাই তাদের বাড়তি আয়ের জন্য কোচিং ছাড়া কোন উপায় নেই। বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা অনেক বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষকরা এতো সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরও কেন তাদের কোচিং বাণিজ্যে লিপ্ত হতে হবে? শিক্ষকদের ক্লাসে পাঠদান বাদ দিয়ে কোচিং বাণিজ্যে ঝুঁকে পড়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা মনে করি, শিক্ষাকে যারা পণ্যে পরিণত করেছেন তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এ ব্যাপারে প্রতিটি স্কুলে নজরদারির ব্যবস্থার পাশাপাশি স্কুল কর্তৃপক্ষকেও ক্লাসে যথাযথ পাঠদানের বিষয়টি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে।