অফুরন্ত সম্ভাবনার বিপরীতে অগণিত সমস্যার আবর্তে এখনো আবদ্ধ সুনামগঞ্জ জেলা। হাওর জেলা সুনামগঞ্জ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে ভিন্নতর। এ অঞ্চলের বিপুল স¤পদ অব্যবহৃত, এখানকার লাখ লাখ টন খাদ্যশস্য বিনষ্ট হয়, অথচ মানুষ থাকে কর্মহীন, বঞ্চিত, গরিব ও অভাবী। এক সময় বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও সুনামগঞ্জ ছিল দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ জনপদ। কিন্তু অকাল বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বার বার এ অঞ্চলের মানুষের জনজীবনকে করেছে বিপর্যস্ত। অফুরন্ত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তা সঠিকভাবে কাজে না লাগানোর ফলে বলা যায় অভাব-অনটনই যেন অবহেলিত মানুষের নিত্যসঙ্গী।
গত ১৬ ডিসেম্বর দৈনিক সুনামকণ্ঠ’র প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়Ñ অকাল বন্যা থেকে হাওরের ফসল রক্ষা এবং শুকনো মৌসুমে নৌ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩২ কি.মি. নদী খননের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দু’টি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাসের অপেক্ষায় ও নদী খননের তিনটি কাজের দরপত্রের যাচাই-বাছাই চলছে। আগামী বছরই বিশাল ব্যয়ের এই কর্মযজ্ঞ শুরু হবে। পাশুয়া থেকে শুরু করে সুলেমানপুর, পাটলাই নদী হয়ে টেকেরঘাটে ৪২কি.মি. নদী খনন হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪ কোটি টাকা। দিরাইয়ের চাপতির হাওরের মুখ থেকে শুরু হয়ে দাওর বিল হয়ে গুদির মুখে ২৮কি.মি. নদী খননে ব্যয় হবে ২০ কোটি টাকা। এই দুটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা পানি স¤পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকে পাঠানো হবে পরিকল্পনা কমিশনে। পরিকল্পনা কমিশনে পাস হলেই দরপত্র আহ্বান করা হবে।
হাওর এলাকায় আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাজগুলো করা হবে। এছাড়া যাদুকাটা নদীতে ৬ কি.মি., আপার বৌলাইয়ে ১৬ কি.মি., পুরাতন সুরমায় ৪০ কি.মি. নদী খনন করা হবে। ব্যয় ধরা হয়েছে যথাক্রমে ১২ কোটি, ৩৪ কোটি ও ১০ কোটি টাকা। এই ৬২ কি.মি. নদী খননের প্রকল্প পরিকল্পনা পাস হয়েছে। বর্তমানে দরপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। জেলার জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুরের উপজেলার নদীগুলো তাদের স্বাভাবিক গতিপথ ফেরত পাবে। নাব্যতা ফিরে পেলে শুকনো মৌসুমে এসব নদী দিয়ে নৌ-চলাচল করতে পারবে। সরকারের এই কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন হলে হাওরাঞ্চল সুনামগঞ্জ দেশের একটি উন্নয়নমুখী জেলা হিসেবে চিহ্নিত হবে। আমরা বর্তমান সরকারের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
তবে অতীতে আমরা দেখেছি সরকার গৃহীত প্রকল্পগুলোতে নানা অনিয়ম হয়েছে। কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে নানা অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সরকার গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় – এটাই আমাদের প্রত্যাশা।