1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৯:৪১ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

দুর্গাপূজা ও কিছু ভাবনা

  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৬

দেবব্রত দাস ::
পৃথিবীর সবচেয়ে আদি ধর্ম হলো হিন্দু ধর্ম। একে সনাতন ধর্ম বলা হয়। কারণ এ ধর্ম বেদ নির্ভর। পৃথিবীর অন্য ধর্মের তুলনায় তার দর্শন বেশ জটিল। অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা ও আচার-অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। যেমন ত্রেতা যুগে রাজা রামচন্দ্র অযোধ্যায় দেবী দুর্গার পূজা করেন অথচ উত্তর প্রদেশে শরৎকালের দুর্গাপূজা তেমন দেখা যায় না।
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শরৎকালের দুর্গাপূজা। বর্ষার বিদায় শরতের আবাহন। শরতের আগমনের ছোঁয়ায় বাংলার খাল, বিল, ঝিলে বকের মতো শ্বেতশুভ্র কাশফুল মৃদু মন্দ বাতাসে অবিরত ঢেউ খেলে যায়, নীল আকাশে ভাসে শিমুল তুলার মতো সাদা মেঘের ভেলা। শরতে মেঘ-পাহাড়ের মিতালীতে মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠে প্রকৃতি। শিশির ভেজা ঘাসের উপর শিউলীর মৌ মৌ গন্ধ এসব মিলিয়ে আকাশে বাতাসে আগমনীর সুর। তার সঙ্গে বাজে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খধ্বনী, উলুধ্বনী, কাসার শব্দ প্রতিটি মন্দিরে। আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথিতে দেবীর আবাহন শুরু। এ তিথি মহালয়া নামে পরিচিত। এই দিনে পিতৃপক্ষের সমাপ্তি ও দেবী পক্ষের শুরু। দেবী পক্ষ শুরুর আগে অর্থাৎ ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ তিথি থেকে এক পক্ষকাল প্রতিদিন পরলোকগত পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য তিল তর্পণ করার শাস্ত্রে বিধান আছে। মহালয়ার অমাবস্যা তিথিতে ঘোর অন্ধকারে আলোর ঝিলিক ছড়িয়ে দেবী দুর্গার মধ্যে আগমনের প্রস্তুতি শুরু হয়। মহালয়ার পর বিল্ব ষষ্ঠীতে দেবীর বোধনের পর দেবী দুর্গার পূজা শুরু হয়।
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে স্বর্গের দেবতারা অসুরদের অত্যাচারে স্বর্গ হতে বিতাড়িত হন। দেবতারা নিরুপায় হয়ে ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের শরণাপন্ন হন। ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের সম্মিলিত তেজোরশ্মির সমন্বয়ে অসুরনাশিনী দুর্গার সৃষ্টি হয়। দশভুজা সিংহবাহিনী দেবী অসুর নিধন করে স্বর্গরাজ্য দেবতাদের হাতে ফিরিয়ে দেন।
কথিত আছে, প্রাচীনকালে সুরথরাজা রাজ্যহারা হয়ে মেধস্ মুনির আশ্রমে আশ্রয় নেন। এ সময়ে সমাধি বশ্য নামে একজন নিজ পরিবার হতে বিতাড়িত হয়ে মেধস্ মুনির আশ্রমে আসেন। তারা উভয়ে মেধস্ মুনির পরামর্শে শক্তিরূপিনী দেবী দুর্গার পূজা ও আরাধনা করেন। ফলে সুরথরাজা তার রাজ্য ফিরে পান আর সমাধি বশ্য নিজ পরিবারে স্থান পেয়ে পরে মোক্ষলাভ করেন। সুরথরাজা বসন্তকালে এ পূজা করেছিলেন বলে তা বাসন্তীপূজা নামে পরিচিত।
ত্রেতাযুগে রামচন্দ্র যখন বনবাস গিয়েছিলেন তখন লংকার রাবণ সীতাদেবীকে হরণ করে লংকার অশোকবনে বন্দী করে রাখে। সীতা উদ্ধারে রাবণবধকল্পে রামচন্দ্র শরৎকালে মা দুর্গার পূজা করেন। শ্রী রামচন্দ্রের একনিষ্ঠ ভক্তিতে প্রীত হয়ে দেবী তাকে সীতা উদ্ধারে বর প্রদান করেন। এ সময় হরিশয়নে ছিলেন। তাই শরৎকালের পূজা ছিল দেবীর অকালবোধন। উল্লেখ্য যে, দেবীর নবমী পূজার দিনে রাবণ বধ হয়েছিল বলে মহানবমী বলা হয়। সীতাদেবী উদ্ধারে রাবণ বধের পর দশমী তিথিতে বিজয় উৎসব পালন করে এ থেকেই বিজয়াদশমী পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর দেবী আসেন একেক বাহনে। এবার ঘোটকে আগমন এবং ঘোটকে গমন।
আগে সুনামগঞ্জ শহরের বিশেষ বিশেষ ধনাঢ্য ব্যক্তি, গ্রামের সামন্ত জমিদারেরা বিরাট আয়োজনে পূজা করতেন। অনেক পূজায় যাত্রাগানের আয়োজন হতো। গ্রামের হিন্দু-মুসলমান দল বেধে পূজা দেখতেন এবং যাত্রাপালা উপভোগ করতেন। পুরনো দিনে ছোট ছোট মফস্বল শহরে যাদের শৈশবকাল কেটেছে তারা বলতে পারবেন পূজা আসলেই আমাদের অভিভাবকেরা দর্জির কাছে পরিবারের ছেলে মেয়েদের নিয়ে যেতেন। মাপমতো সাধারণ মানের জামা-কাপড় তৈরি করে দিতেন। এই নতুন জামা পেয়ে খুশিতে মন ভরে যেত। পূজার দিন নতুন জামা পরে পাড়ার সহপাঠীদের সাথে পূজা দেখা যে কি আনন্দ তা ব্যক্ত করার নয়। এখন পূজা গ্রাম ও শহরে সার্বজনীন। ব্যক্তি পরিবারকেন্দ্রিক পূজার সংখ্যা একেবারেই কম। প্রতিটি পূজা কমিটির মাঝে অদৃশ্য প্রতিযোগিতা দেখা যায়। প্রতিমা তৈরি, কম্পিউটারের সাহায্যে নানারকম আলোকসজ্জা, প্রসাদ বিতরণ, বিভিন্ন আদলে মন্ডপ নির্মাণ। এই সমস্ত দিক বিবেচনায় পূজার দিনগুলোতে পূজামন্ডপে উপচেপড়া ভিড় লেগে থাকে। বর্তমান সময়ে চাকরিজীবীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের আয় ও জীবন যাত্রার মান বেড়েছে। ঈদ-দুর্গাপূজা ও পহেলা বৈশাখ কাপড় ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা সারা বছরের ব্যবসার অর্ধেক ব্যবসা এই সময়গুলোতে করে নেন। পূজা আসলে পরিবারের সকলের জন্য চাই নতুন জামা-কাপড়। যার জন্য এই সমস্ত উৎসবে কাপড়ের দোকানগুলোতে বেচাকেনার কোন কমতি নেই। প্রতিটি দোকানে দেশি-বিদেশি রকমারি ডিজাইনের জামা কাপড়ের পর্যাপ্ত মজুদ থাকে, এতে ছেলেমেয়েরা না কিনে ফেরত আসার উপায় নেই। পূজা চলাকালীন উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদ্যাপন করার জন্য রাষ্ট্র ও সরকার থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়। সাধারণত সন্ধ্যার পর পূজার সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে শুধু পূজার আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে না থেকে সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়। আজকে দেখা যায় বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া সুদ্দূর ইউরোপ-আমেরিকাসহ যেখানেই বাঙালি হিন্দুর বসবাস আছে সেখানেই বিরাট আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে দেবী দুর্গার পূজা হচ্ছে। শারদীয় দুর্গাপূজাকে বাঙালিদের জাতীয় উৎসবই বলা চলে। দশমীর বিসর্জনের মধ্যদিয়ে মা দুর্গা কৈলাসে স্বামীর গৃহে ফিরে যাবেন।
পরিশেষে এটাই প্রত্যাশা করব দেবী দুর্গা যেন সকল প্রকার অশুভশক্তি ও অপশক্তি বিনাশসাধন করে শুভশক্তি ও মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটান। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে আমরা যেন প্রতিবছর সুন্দরভাবে মায়ের পূজা করতে পারি। আজকের দিনে মা দুর্গার নিকট আমাদের প্রার্থনা দেশ ও বিশ্ব মানব জাতির উপর শান্তির অমৃত বাণী বর্ষিত হোক।
[লেখক : সাবেক ব্যাংকার]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com