1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫০ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

উৎসবের অপেক্ষায় হাওরের ৩ লাখ ৭৮ হাজার কৃষক পরিবার

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪

শামস শামীম ::
সুনামগঞ্জের ছোট বড়ো ১৩৭ হাওরের ধানক্ষেত সবুজের খোলস ছেড়ে হলুদাভ আভায় রূপ নিচ্ছে। শ্রমঘামে ফলানো একমাত্র ফসল গোলায় তোলতে হাওরের কান্দায় (পতিত উঁচু ভূমি) ধানখলা তৈরি করছেন কৃষক। শ্রমিকরাও হাওরের মধ্যখানে জাঙ্গালে, থাকার ঘর তৈরি করে নিয়েছেন। বোরোচাষে জড়িত প্রায় ৩ লাখ ৭৮ হাজার চাষী পরিবার ও প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার ধানকাটা শ্রমিক উৎসবের অপেক্ষায় আছেন। কষ্টের ফসল যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেড়ে না নেয় তার জন্য গ্রামে গ্রামে পালিত হচ্ছে বিশেষ লোকাচার। প্রকৃতিকে খুশি রেখে মানত পূরণ করে সোনার ধান গোলায় তোলতে চান কৃষক। এদিকে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ভালোয় ভালোয় ফসল গোলায় ওঠলে বাম্পার ফলন হবে। উৎপাদিত হবে প্রায় চার হাজার ১০ কোটি টাকার ধান।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হাওরে এবার ৭০.০৫ ভাগ উফশী (উচ্চ ফলনশীল ধান), ২৯ ভাগ হাইব্রীড ধান ও ০.০৫ ভাগ স্থানীয় প্রজাতির দেশি ধান আবাদ হয়েছে। সব মিলিয়ে বোরো আবাদ হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর। ১৩৭টি ছোট বড়ো হাওরের হাওরের প্রায় ৩ লাখ ৭৮ হাজার পরিবার এবার বোরো ধান চাষ করেছেন। ৮ এপ্রিল পর্যন্ত হাওরে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। ধান কাটার জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক ও যন্ত্রও রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে হাওরে পুরোদমে ধানকাটা শুরু হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। কৃষকের ধান যাতে ১৫ দিনের মধ্যেই কাটা যায় সে লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন শ্রমিকদের প্রস্তুতি নিয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কঠোর নির্দেশনা হাওরের বোরো ধান যেকোন মূল্যেই গোলায় তোলতে হবে।
সূত্র আরো জানায়, হাওরের বোরো ধান কাটার জন্য ৮৭০টি কম্বাইন হার্ভেস্টর ও ২০০টি রিপার যন্ত্র রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে একটি হার্ভেস্টর ১শ জন শ্রমিকের ধান কাটতে পারে। অন্যদিকে রিপার গড়ে ২০ জন শ্রমিকের ধান কাটতে পারে। এছাড়াও হাওরের ১ লাখ ৯০ হাজার নিয়মিত কৃষিশ্রমিক, ৩০ হাজার অনিয়মিত শ্রমিক ও বাইরের জেলার আরো প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক ধান কাটার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। তবে বর্তমানে দেশি বোরো ধান, বিআর ৮৮, ৯৬, হাইব্রীড ধান কাটা হচ্ছে। অন্যান্য ধানও পাকতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহেই পুরোদমে ধান কাটা লাগবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছর ১ লক্ষ ৫৭ হাজার হেক্টর উফশী ধান, ৬৫ হাজার হেক্টর হাইব্রীড ধান ও ১১৯০ হেক্টর স্থানীয় প্রজাতির ধান চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৪শ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। প্রতিদিনই প্রতিটি হাওরে অল্প অল্প ধান কাটা হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটার ধুম পড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সদর উপজেলার ডুপিকোণা গ্রামের ধান কাটা শ্রমিক ইনসান মিয়া বলেন, আমরা গরিব মানুষ। হারাবছর দিনমজুরি করি। বৈশাগ আইলে অন্য কাজ থইয়া আউরো গিয়া ধান কাটি। আমরা দুই ভাই ধান কাইট্যা ৬ মাসের ধান রুজি করতে পারি। আমরার মতো হকল গ্রামের শয় শয় মানুষ ই সময় ধান কাইট্যা বালা রুজি করে। যদি বছর বালা অয় গিরস্তের লগে আমরাও বালা তাকি।
শাল্লা উপজেলার বাহাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু বলেন, হাওরে এবার যথাসময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় বোরো ফসল ভালো হয়েছে। যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে না পড়ে তাহলে বাম্পার ফলন হবে। তিনি বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে দেশিবোরো ধান কিছু কাটা হচ্ছে। অন্যান্য ধানও পাকার পথে। আগামী সপ্তাহ থেকেই পুরোদমে ধানকাটা শুরু হবে হাওরে।
দিরাই উপজেলার ভাটিধল গ্রামের কৃষক নুপূর চৌধুরী বলেন, আমাদের টাঙ্গুয়ার হাওরসহ আশপাশের হাওরে ধান ভালো হয়েছে। ধান পাকতেও শুরু করেছে। যারা দেশিপ্রজাতির ধান রোপণ করেছিলেন সেই ধান কাটতে শুরু করেছেন। বৈশাখের আবহ শুরু হয়ে গেছে হাওরের গ্রামগুলোতে। নির্বিঘেœ ফসল তোলতে নানা লোকাচার পালিত হচ্ছে। ধানখলা তৈরি, ওড়া (খুপড়িঘর) তৈরি চলছে। এক সপ্তাহ পরেই হাওরের চিত্র বদলে যাবে। যদি ফসল ভালোভাবে গোলায় তোলা যায় তাহলে কৃষকের ভাড়ার ভরে যাবে ধানে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, সোমবার পর্যন্ত আমাদের হাওরের প্রায় ৪০০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। যার বেশিরভাগই দেশিপ্রজাতির আগাম বোরো ধান। তিনি আরো বলেন, আগামী সপ্তাহে বন্যার আশঙ্কা নাই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন ক্ষয়-ক্ষতি না হলে হাওরে এবার বাম্পার ফলন হবে। তিনি বলেন, হাওরের উৎপাদিত ধান হবে প্রায় ১৩ লক্ষ ৭০ হাজার টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার ১০ কোটি টাকা।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com