শহীদনূর আহমেদ ::
সারাদেশ ঈদ উৎসবের আয়োজনে মাতলেও ঈদের আনন্দ নেই কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত শান্তিগঞ্জ ও সদর উপজেলার উপজেলার অন্তত ১৫ গ্রামের সহ¯্রাধিক পরিবারে। খোলাআকাশের নিচে দিন কাটছে ঘরহারা হাজারো মানুষের। ঈদের আনন্দের চেয়ে আবাসন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।
শান্তিগঞ্জ উপজেলায় পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের পাগলা বাজার সংলগ্ন বেদেপল্লীতে বসবাস করতো ৯টি পরিবার। গেল ৩১ মার্চের কালবৈশাখী ঝড়ের তা-বে তছনছ হয়েগেছে নি¤œ আয়ের এই পরিবারগুলোর সাজানো ঘর। গেল এক সপ্তাহ ধরে খোলাআকাশের নিচে মানবেতরভাবে বসবাস করছেন পল্লীর শিশু, বৃদ্ধসহ নারীরা। ঘর-আসবাবপত্র না থাকায় ঈদের কোনো আমেজ নেই এসব পরিবারে।
যেখানে তিনবেলা খাবার সংগ্রহ করাই কষ্টসাধ্য সেখানে ঈদে পরিবারের জন্য নতুন পোশাক ও সুস্বাদু খাবার সংস্থান করা স্বপ্নের বললেন ঘরহারা মানুষগুলো। কথা হয় বেদে পল্লীর অসহায় রমিজা বেগমের সাথে। রমিজা জানালেন, স্বল্প পুঁজিতে গ্রামে গ্রামে বাসনপত্র বিক্রি করে চলতো তাঁর সংসার। কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যবসার বাসনপত্রসহ ঘর ল-ভ- করে হয়েছে। ঘরের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। দুর্বল বাঁশের পালাগুলো গাছ পড়ে ভেঙে গেছে। এক সপ্তাহ ধরে পলিথিন মাথার উপরে টাঙিয়ে রাত্রিযাপন করছেন ছেলে সন্তান নিয়ে। ঈদ নিয়ে কোনো আয়োজন নেই তার সংসারে।
কষ্ট আর ক্ষোভের কথা জানিয়ে রমিজা বেগম বলেন, আমাদের কিতার ঈদ। আল্লাহ আমরারে ঈদ দিছেন না। ঘুমাইবার জায়গা নাই, কোনো আসবাবপত্র নাই। পরনের কাপড় নাই। যেখানে দুইবেলা ভাত খাইতাম পাররাম না ইকানো ঈদে আমরা কিতা করতাম।
বেদেপল্লীর চন্দন মিয়া বলেন, পরিবারের জন্য কোনো কিছু কিনতে পারছি না। ৫-৬দিন ধরি খেয়ে না খেয়ে আছি। ঈদ আমাদের জন্য না। ঈদ ধনী মানুষের। যেখানে আমার ঘর নেই, দুয়ার নেই, সেখানে ঈদের আনন্দ কিসের।
বেদেপল্লীর মতো একই অবস্থা শান্তিগঞ্জ উপজেলার রায়পুর, কাদিরপুর, ইসলামপুর, ইনাতনগর, নবীনগর, সদরপুর, আস্তমা, নূরপুর, সিচনি, সদর উপজেলার সদরগড়, সাহেবনগর এলাকার সহ¯্রাধিক পরিবারের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, বসতভিটায় পড়ে আছে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া চাল, বেড়া। প্রায় সব বসতঘরে কালবৈশাখী ঝড়ের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। এসব পরিবারের পুরুষ সদস্য ভাঙাচোরা মালামাল দিয়ে আবাস তৈরিতে ব্যস্ত। বছরের অন্যতম ঈদকে সামনে রেখে তাদের নেই কোনো বাড়তি আয়োজন। পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য নতুন পোশাক কিনতে পারেননি অনেকেই। ঈদের পোশাকের পরিবর্তে গৃহ নির্মাণসামগ্রী কিনছেন ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন। ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন কালবৈশাখী ঝড়ে সর্বস্ব হারানো মানুষজন।
পূর্ব পাগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জগলুল হায়দার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। কালবৈশাখী ঝড় মানুষকে নিঃস্ব করে দিয়ে গেছে। মানুষ কই যাবে, সরকার যদি সাহায্য না করে। এই ঈদে আমার ইউনিয়নবাসীর কোনো আমেজ নেই। মনে হচ্ছে যেন নিরানন্দ অবস্থা। এই মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে গৃহ নির্মাণসামগ্রী দেয়া প্রয়োজন। ইতোমধ্যে যা দেয়া হচ্ছে, তা পর্যাপ্ত না।
ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে তালিকা করে জিআর চাল, ঢেউটিন, নগদ টাকা সহায়তা করা হচ্ছে। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে আসছে। আশা করছি আমরা এই দুর্যোগ দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে পারবো।