মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি চিকিৎসাসেবা। পৃথিবীতে মানুষের জন্যে এই স্বাস্থ্যসেবা কিংবা চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার দু’টি স্বীকৃত পদ্ধতি আছে। সমাজতান্ত্রিক নীতি অনুসারে এই সেবাটি সকল নাগরিকের জন্য নিখরচায় দেওয়া হয় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। পুঁজিবাদী নীতি অনুসারে চিকিৎসাসেবা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিখরচায় দেওয়া হয় না। এই দ্বিতীয় নিয়মে টাকার বিনিময়ে চিকিৎসকরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন বলে আমাদের দেশের চিকিৎসাসেবা একটি দামি পণ্য হিসেবে মান্যতা পায় এবং এক শ্রেণির অসৎ চিকিৎসক চিকিৎসাসেবাকে কেন্দ্র করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল অর্থ উপার্জনের সুযোগ নেন। যেমন স্বাভাবিক বা প্রকৃতিকভাবে সন্তান জন্মের সুযোগ-সম্ভাবনাটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যা করে শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান জন্মকে অবধারিত করা হয়। এতে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসালয় প্রচুর মুনাফা অর্জন করেন। অপরদিকে চিকিৎসাসেবা ও ঔষধের দাম দিনে দিনেÑ নিখরচা তো বড় কথাÑ এমনকি বাড়ে ছাড়া কখনই কমে না। তাছাড়া ভুল চিকিৎসার শিকার হওয়াসহ অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে রোগীর পকেটকাটার ব্যবস্থা তো আছেই।
গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে, ‘দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে যা যা করার দরকার তাই করবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।’ তাঁর এই ঘোষণার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই এবং সেই সঙ্গে এই কামনা করি যে, তিনি যেনো তার এই মহৎ কাজে সফলতা লাভ করেন। কিন্তু বিদগ্ধ মহলের ধারণা, স্বাস্থ্যসেবা সহজ ও সুলভ করার জন্য স্বাস্থ্যনীতিকে আমূল বদলে দিতে হবে। চিকিৎসাকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়ে সেটা হবে না। আবার সরকারি খাতে আমলাতান্ত্রিক প্রভুত্বব্যঞ্জক দুর্নীতি থেকে স্বাস্থ্যখাতকে সুরক্ষা দিতে হবে। এই দু’টি পৃথক কর্ম একসঙ্গে সমাধা করা সত্যিকার অর্থেই আমাদের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। আপাতত এর বেশি কীছু বলতে চাই না, কারণ এই দেশে যাঁরা জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করেন তাঁরা প্রতিপদে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হন। সফল হতে গেলে আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকেও শত প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করতে হবে, তাঁকে লড়তে হবে প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার সঙ্গে।