যাদুকাটা নদীর ইজারা বাতিল ও বালি উত্তোলন বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর পক্ষ থেকে। গত বুধবারের (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) দৈনিক সুনামকণ্ঠে এ সংক্রান্ত সংবাদপ্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। আমরা জনহিতকর কাজে বেলার সক্রিয় প্রয়াসকে স্বাগত জানাই এবং এই সুবাদে তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি।
কিন্তু অভিজ্ঞমহলের ধারণা এই যে, ‘পরিবেশ প্রতিবেশ বা জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট বা সরকারি বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত বা জনস্বাস্থ্য বা জনস্বার্থ বিঘিœত হবার আশঙ্কা’র অজুহতে ‘ইজারা বাতিল ও বালি উত্তোলন বন্ধ’ করে বালি-পাথর মহালে সৃষ্ট সমস্যার কোনও সমাধান সম্ভব নয়, বরং এতে বাড়তি সমস্যার সৃষ্টি হবে। তাঁরা মনে করেন, বালি-পাথর মহালের ইজারা বাতিল ও বালি উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হলে সার্বিক বিবেচনায় সুরমার উত্তরপাড়ের সামগ্রিক আর্থনীতিক কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে হাজার হাজার বারকিশ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে সপরিবারে খাদ্যঘাটতির শিকার হয়ে দুর্গত অবস্থায় পতিত হবে এবং প্রকারন্তরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় একধরনের দুর্ভিক্ষাবস্থার সৃষ্টি হবে।
আসলে সাধারণ মানুষ ইজারা বাতিল চান না, নিয়ম মেনে ইজারা চান। তাঁরা বালি-পাথর উত্তোলনের ক্ষেত্রে পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি করতে সক্ষম ড্রেজার-বোমা মেসিনসহ বিভিন্ন নামের খননযন্ত্রের ব্যবহার চান না। এইসব খননযন্ত্রের ব্যবহার ইজারানীতির পরিপন্থি। সোজা কথায় ইজারা নীতির গেজেট মোতাবেক, ‘পরিবেশ অক্ষুণœ রাখা’র নিয়ম প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে। বেলচা দিয়ে বালি-পাথর উত্তোলন না করে উত্তোলন করা হচ্ছে ড্রেজার-বোমা মেসিন দিয়ে এবং কেবল নদীর তলদেশ নয় নদীর পাড় কাটা হচ্ছে। এতে করে প্রতিবেশ-পরিবেশের বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। অথচ বেলচা দিয়ে বালি-পাথর উত্তোলন করা হলে পরিবেশ-প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষিত হতো, অপরদিকে হাজার হাজার বারকিশ্রমিক রোজগার করে বাঁচতে পারতো, পরিজন নিয়ে। তাই ‘বেলা’র উচিত ছিল ইজারানীতি লঙ্ঘনকারী ইজারাদার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করা, অথবা যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে ব্রতী হওয়া। কিন্তু তা না করে ইজারা বাতিল ও বালি-পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়ার অর্থ একটাই হতে পারে, আর তা হলো : মাথা ব্যথা সারাতে গিয়ে মাথা কাটার ব্যবস্থা করা। এর আর একটি সরলার্থ করা যেতে পারে, আর সেটা হলো ; ইজারাদার ও প্রশাসনের অসাধু প্রতিনিধিদের দোষত্রুটি আড়াল করা ও তৎপ্রেক্ষিতে আর্থিক স্বার্থ নিশ্চিতকরণের পথ প্রশস্ত করা। বেলার এই লিগ্যাল নোটিশের কার্যকারিতা শেষ পর্যন্ত বালুমহালগুলোতে সৃষ্ট উদ্বৃত্তশ্রম শোষণের চলমান প্রক্রিয়া, অর্থাৎ সম্পদ বণ্টনের সঙ্গে আপোষ রফায় পর্যবসিত হবে। এমনটাই মনে করেন অভিজ্ঞমহলের কেউ কেউ।