পত্রিকান্তরে সংবাদ বেরিয়েছে যে, এখন থেকে সংখ্যা না বাড়িয়ে দক্ষ চিকিৎসক তৈরিই স্বাস্থ্যনীতির মূল লক্ষ্য হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনামন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন। তিনি ডাক্তারের সংখ্যা বা পদের সংখ্যা বাড়াতে চান না, বাংলাদেশে সুষ্ঠু, সুন্দর, দক্ষ ও অভিজ্ঞ ডাক্তার বানাতে চান। আমরা মন্ত্রীমহোদয়ের সদিচ্ছাকে সম্মান দিয়ে তাঁকে সাধুবাদ জানাই, এ জন্যে যে, তাঁর ঘোষণাটি দেশে একটি গণমুখি ও মুনাফাবিরোধী স্বাস্থ্যনীতি প্রতিষ্ঠার আশ^াস দেশের মানুষকে দিয়েছে। এবংবিধ আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতি আমাদের দেশের রাজনীতির মঞ্চ হতে বার বার প্রক্ষিপ্ত হয়ে থাকে কিন্তু কার্যত সেটা হয় আমলাতান্ত্রিক করিবকর্মানীতির প্রলম্বনপ্রকরণের ফাঁদে পড়ে মাঠে মারা যায়, না হয় মুনাফা লাভের বাণিজ্যিকতার যাদুমন্ত্রে বশীভূত হয়ে সাধারণ মানুষকে কোনও সুবিধা না দেওয়ার নীতি কার্যকর হয়ে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রাপ্তিকে দুর্লভ করে তোলে।
প্রকৃতপ্রস্তাবে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার পরিসরে ঔষধ প্রস্তুত ও বিপণনে ঔষধনীতির অপব্যবহারসঞ্জাত বিভিন্ন অনৈতিকতার সঙ্গে আছে পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থাটিকে অর্থমৃগয়ার উৎকৃষ্ট ক্ষেত্রে পর্যবসিত করার প্রবণতা। অভিজ্ঞমহলের ধারণা স্বাস্থ্যব্যবস্থার পরিসরে প্রতিষ্ঠিত এইসব গণবিরোধী কার্যক্রম উৎখাত না করে ডা. সামন্ত লাল সেনের ঘোষিত দক্ষ চিকিৎসক তৈরির কার্যক্রম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। তারা মনে করেন, স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে পুরোপুরি গণমুখি ও সেবামূলক না করা গেলে সেটা একটি ধনসঞ্চয়ের উৎকৃষ্ট বাণিজ্যিক ক্ষেত্র হিসেবেই থেকে যাবে, বর্তমানে যেমন আছে, মানবসেবার চূড়ান্ত লক্ষ্য চিকিৎসাকে নিখরচায় সহজপ্রাপ্য করে তোলা যাবে না।
আর একটি বিষয় প্রসঙ্গক্রমে বলে নেওয়া বোধ করি অসঙ্গত হবে না। চিকিৎসকের সংখ্যা না বাড়িয়ে দক্ষ চিকিৎসক তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকের অভাবে চাহিদা মোতাবেক চিকিৎসাসেবা দিতে ব্যর্থ হওয়ার বিড়ম্বনা আরও বাড়বে বই কমবে না, সেটাও স্বাস্থ্যমন্ত্রী অথবা স্বাস্থ্যনীতি নির্ধারকদের ভেবে দেখা দরকার আছে। আসলে আমাদের দরকার দক্ষ এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক।