1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১১:১৬ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

শ্রদ্ধার্ঘ্য, সুনামগঞ্জে পীর হাবিবের শূন্যতা : অহী আলম রেজা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

বন্ধুরা বলেছিলেন, পীর হাবিবুর রহমান নামে সাহিত্যিক হওয়া যায় না, রাজনীতিবিদ হওয়া যায়। তারপরও তিনি সাহিত্যচর্চা করেছেন। উপন্যাস লিখেছেন, গল্প লিখেছেন। নাটক লিখতে চেয়েছেন। রিপোর্ট করেছেন কবিতার মতো। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে রিপোর্টিংয়ের জীবন বেছে নিয়েছেন। অনেক কিছু হতে পারতেন কিন্তু সাংবাদিকতাই ছিল পেশা এবং নেশা।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে পীর হাবিব আপস করেন নি। তিনি বলতেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সন্তান আমি, মহাত্মাগান্ধী আমার আত্মার আত্মীয়। কৈশোরে প্রেমে পড়েছিলাম ইন্ধিরাগান্ধীর। আলেন্দের মৃত্যুশোক সইতে না পারা নেরুদার চিরবিদায়ে কেঁদেছিলাম নিভৃতে। চে গুয়েভারার মৃত্যু আমার বাউল মনকে বিপ্লবী করেছিল। ক্যাস্ত্রোর বিপ্লবী জীবন এখনো আমাকে অভিভূত করে।”
তিনি কখনো শেকড় বিচ্ছিন্ন হননি। সুনামগঞ্জকে কখনো ভুলেননি। কবিতায়, গানে, স্লোগানে, লেখায়, টকশোতে বারবার সুনামগঞ্জের কথাই বলেছেন। তাকে হাওর টানতো। টানতো আসমান ভাইঙ্গা নেমে আসা জোছনার সঙ্গে জলতরঙ্গের অপূর্ব দৃশ্য।
দেশ-বিদেশের স্বজন-বন্ধুদের কাছে তিনি সুনামগঞ্জকে বর্ণনা করেছেন এভাবে- “ভরা বর্ষায় এ শহর হাতছানি দিয়ে ডাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা কাজী নজরুল ইসলামের দেখা হয়নি এই ভরা পূর্ণিমার সঙ্গে দেখার হাওর বা টাংগুয়ার হাওরের জলতরঙ্গের রূপ। সিলেট এলেও এখানে না আসার আফসোস নিয়ে ফিরেছেন তারা।
কবি- রাজনীতিবিদ সরোজিনী নাইডু এই শহরের রূপ দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। মানুষের উষ্ণ ভালোবাসার টানে বারবার এসেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। টাউন হলের এক চিলতে জায়গায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। এখানে আসেননি ইবনে বতুতা, হিউয়েন সাঙ কিংবা নেপোলিয়ন। আসেননি মহাত্মা গান্ধী। কোনো পাঠান যোদ্ধার স্মৃতিচিহ্নও নেই এই শহরে। তবু ভরা বর্ষার ভরা পূর্ণিমা রাতের জন্য এ এক অনন্যসাধারণ শহর। এটাই আমাদের নান্দনিক সুনামগঞ্জ।”
সুনামগঞ্জের অনেক অখ্যাত ব্যক্তিদের তিনি মিডিয়ায় এনে পরিচিত করেছেন, রাজনীতিতে জায়গা করে দিয়েছেন কিন্তু কৃতজ্ঞতাটুকু তারা প্রকাশ করেননি। তিনি মনে করেছেন ঘরেইতো আমার গর্ব করার জায়গা আছে। তাঁর সহোদর অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান পীর ৭৫ পরবর্তী সুনামগঞ্জ ছাত্রলীগে একাধিকবার নেতৃত্ব দিয়েছেন। ক’জনের এ গৌরবময় ইতিহাস আছে?
পীর হাবিব বার বার বলেছেন, এ শহর কবিতার শহর, এ শহর গানের শহর, এ শহর প্রেমের শহর, এ শহর আড্ডার। এ শহরবাসীকে জোছনা দেখাতে বাতি নিভিয়েছিলেন অকাল প্রয়াত কবি মমিনুল মউজদীন। এ শহর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর। ঈদের সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংখ্যালঘু স্বজনদের নিমন্ত্রণ করা পারিবারিক দায়িত্ব ছিল। অক্ষয়কুমার আসাম প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। অনেক মুসলমান পরিবারে তিনি ইফতার পাঠাতেন।
নান্দনিক সৌন্দর্যের এই শহরে এখন টিনের বাংলো ধরনের বাড়িঘর ভেঙ্গে দালানকোঠা উঠেছে। বানের ¯্রােতের মতো বসতি গড়তে আসা মানুষজন হাওর, বাঁওর ভরাট করে বসতি করছে। এক সময় গভীর রাতে মরাটিলায় কবরস্থানে বসে বাঁশিতে সুর তুলতেন কুতুব উদ্দিন। কবরস্থানের চারদিকে জ্বলতো জোনাকি। এখন বাঁশির সুর নেই। মানুষের কোলাহলে জোনাকিও জ্বলে না। প্রতি শীতে যাত্রাপালা হতো, বাউলের আসর বসতো, কবিয়াল লড়াই হতো। ক্রিকেট লীগ হতো, ফুটবলের আসর বসতো। এখন আর এসব নেই। সর্বশেষ নন্দিত নেতা ও কবি মমিনুল মউজদীনের অকাল মৃত্যুতে শহরে নেমে এসেছে চরম সাংস্কৃতিক বন্ধাত্ব। কেউ দাঁড়ায় না, কেউ এগিয়ে আসে না।
সারাদেশের মতো এখানেও মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই না পাওয়া তথাকথিত রাজনৈতিক কর্মীরা ডিজিটাল ব্যানারে ছবি টানিয়ে অশ্লীল সব দৃশ্য উপহার দিচ্ছেন। যার নামে পোস্টার দেওয়া হয় তাকেও কেউ চিনে না, যে দেয় তাকেও কেউ চিনে না। অবৈধ টাকার জোরে মানুষের কাছে পরিচিত হওয়ার এমন নির্লজ্জ চিত্র শুধু আমার প্রেমের শহরেই নয়, সারাদেশে দেখা যায়। দেশে রাজনীতি আছে, দল আছে, কর্মীও আছে। নেই শুধু জননেতা, ছাত্রনেতা ও রাজবন্দি। এসব এখন নির্বাসিত। মোসাহেব, কর্মচারী, ধান্দাবাজ, দালাল, লুটেরাচক্রের সিন্ডিকেটের ফাঁদে রাজনীতি। সৃজনশীল নেতাকর্মীরা মুখ ঘুরিয়ে ঘরে উঠে যাচ্ছেন।
রাজনীতির অশুভ ছায়ায় তারুণ্যকে কবিতার পা-ুলিপি, ক্রিকেট ব্যাট বা দোতরা এগিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। কলেজ সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় ছাত্ররা এখন আর ছাত্র রাজনীতি করে না। এমনি সৃজনশীল প্রেমিকও শহরে দেখা যায় না। তারপরও মনে হয় এখনো সময় আছে শহরকে বাঁচানোর।
পীর হাবিব তাঁর লেখনীর মাধ্যমে যুগ যুগান্তর বেঁচে থাকবেন সুনামগঞ্জের মানুষের অন্তরে।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com