পীর হাবিবুর রহমান, কলমের জোরেই প্রথমে এই নামটির সঙ্গে দেশের মানুষের পরিচয় ও চেনা-জানা। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে ৫৮ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান বরেণ্য সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান।
১৯৬৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ শহরের হাসননগরে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী স¤পাদক, বরেণ্য সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমান। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার বাবার নাম মোহাম্মদ রইছ আলী পীর ও মা সৈয়দা রাহিমা খানম। পীর হাবিব সুনামগঞ্জের সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ (সম্মান), এমএসএস করেন। ১৯৮৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হয়। পাশাপাশি গল্প লেখালেখি করতেন।
সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেন ১৯৯১ সালে। ১৯৯২ সালে বাংলাবাজার পত্রিকার শুরু থেকেই ছিলেন। দৈনিক যুগান্তরের যাত্রার শুরু থেকে ছিলেন। বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে তাঁর অনেক রিপোর্ট বেশ আলোচনায় আসে ওই সময়। এরপর যোগ দেন দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায়। সেখান থেকে যোগ দেন আমাদের দৈনিক অর্থনীতি পত্রিকায়। তারপর মানবকণ্ঠে। সর্বশেষ তিনি গুরুত্বের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নিউজপোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজের প্রতিষ্ঠাতা।
ভারতের লোকসভা নির্বাচন কাভার করাসহ ২০০০ সালে জাতিসংঘের সহ¯্রাব্দের অধিবেশন, জর্ডানের আইপিও সম্মেলনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের সংবাদ প্রচার করেন বরেণ্য সাংবাদিক ও কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমান। ২০০৭ সাল থেকে পত্রপত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখতে থাকেন। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির বাইরে থেকে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বহুল আলোচিত রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার টকশোতে বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করতেন যা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতো ও দেখতো শ্রোতা-দর্শক। মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও গণতন্ত্রের স্বপক্ষে তাঁর সাহসী ও ক্ষুরধার লেখনী ও বক্তব্য অনুপ্রাণিত করতো তরুণ প্রজন্মকে।
রাজনীতির অলিতে-গলিতে ঘুরে ঘুরে ছো মেরে সত্যটা ছিনিয়ে পাঠকের সামনে মেলে ধরেই সেই নব্বইয়ের দশকে রিপোর্টার পীর হাবিবুর রহমান দেশজুড়ে পরিচিতি পান। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিকাশকালে পীর হাবিবুর রহমানকে আপাদমস্তক মানুষ আবিষ্কার করে টিভি পর্দায়। টক শোর সূচনালগ্ন থেকেই নিজেকে জড়ান। জীবনের মধ্যপর্বে পৌঁছে পরিচিতির সীমিত আঙিনা ভেঙে রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও তুখোড় বিশ্লেষক পীর হাবিব হয়ে ওঠেন তুমুল জনপ্রিয়, দেশে ও বিদেশে। আজকের রাজনৈতিক ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করে তিনি বলতে পারতেন আগামী দিন রাজনীতিতে কি ঘটতে যাচ্ছে। খবরের ভেতরের খবর বের করে আনতে কাকে খোঁচা দিতে হবে, তা ভালোই জানেন। লেখায় যুক্তির খেলা, সীমিত আবেগ আর জাগ্রত বিবেকের অপূর্ব সম্মিলন ঘটান বলেই তার কলাম হৃদয় স্পর্শ করে যায়। একাকার হয়ে যান পাঠক, ভাবতে শুরু করেন এ যে তার মনের কথা।
পীর হাবিবুর রহমানের বিভিন্ন কলাম নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বেশকিছু বই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, অব দ্যা রেকর্ড, এক্সক্লুসিভ, টক অব দ্যা প্রেস, ভিউজ আনকাট ও মন্দিরা প্রভৃতি। এরই মধ্যে তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছেন। গত তিন বইমেলায় প্রকাশ পাওয়া ‘জেনারেল ও কালো সুন্দরীরা’, ‘লজ্জাবতী’ ও ‘বুনোকে লেখা প্রেমপত্র’ পাঠকনন্দিত হয়েছে।
সাংবাদিকতায় তার উল্লেখযোগ্য কাজ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রামাণ্য পীর হাবিবুর রহমান’ নামের একটি গ্রন্থ। পীর হাবিবুর রহমান তার কর্ম ও লেখনীর মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে। দেশবরেণ্য সাংবাদিক পীর হাবিবের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি জানাই বিন¤্র শ্রদ্ধা।