1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:৫৭ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সবার ভোটে জিতল বাংলাদেশ : আ.স.ম. ফিরোজ-উল-হাসান

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

৭ জানুয়ারি ২০২৪ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়যুক্ত হয়েছে। এখন জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি দেশ এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। প্রশ্ন হলো, এই প্রশ্ন তোলার সুযোগ কি আছে? যেখানে ৪৮ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে, সবাই সুষ্ঠুভাবে ভোট দিয়েছে সেই জায়গায় এই প্রশ্ন কেন? ৫২ বছর আগে একটি তর্জনীর ঝঙ্কার, ৭ কোটি বাঙালির হুঙ্কার ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছিলাম একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, বাংলাদেশ।
স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির মূলমন্ত্রই ছিল ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-বেশভূষা নির্বিশেষে জনমানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, বাঙালি জাতিসত্তা ও সংস্কৃতির অনন্য অস্তিত্বকে প্রতিষ্ঠিত করা। সেই ১৯৫৪ তে যুক্তফ্রন্টের প্রাদেশিক নির্বাচন থেকে ১৯৭০ এর কন্সটিটুয়েন্ট এসেম্বলি বর্জন, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে ২০২৪ এর স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ়-প্রত্যয়। ইতিহাসের প্রতিটি পাতায় বাঙালির প্রতিটি গল্পে মিশে আছে নাগরিক অধিকার আদায়ের অদম্য স্পৃহা। আর সেই গণতান্ত্রিক স্পৃহাই প্রতিবার ফুটে ওঠে আমার ভোটে, আমার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে। আসন্ন ২০২৪ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তাই আমার এই একটি ভোট অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।
যদিও গণতন্ত্র বা ডেমোক্রেসি নিতান্তই আত্ম-উপলব্ধিমূলক, তবু এর ব্যুৎপত্তিগত বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় যে এর অর্থ জনগণের (ডেমোস) ক্ষমতা (ক্রাটোস)। রাজনীতি বিজ্ঞানে এর ব্যবহার স্থান-কাল-সময় ভেদে নানান দেশে নানানরকম। ষোড়শ মার্কিন রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকন গেটিসবার্গে বলেছিলেন যে গণতন্ত্র জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য, ও জনগণ এর হাতেই মুষ্টিমেয়! ‘নিশ্চয়ই বুলেটের চেয়ে ব্যালট বেশি শক্তিশালী’, তিনি বলেছিলেন। ফিরে তাকাই ফরাসী রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মন্টেস্ক্যু’র কথায় যিনি ‘দ্যা স্পিরিট অফ লজ’ গ্রন্থে লিখেছিলেন কিভাবে ভোটার-রাই গণতন্ত্রের ‘মালিক’ আর তারাই পারে একটি সার্বভৌম রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে। অথবা এরিস্টটল যিনি গণতন্ত্রকে উৎকৃষ্ট শাসন মনে না করলেও তার মতে গণতন্ত্র মানেই প্রত্যেক নাগরিকের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার অধিকার। আর এই অধিকার-ই হচ্ছে ভোটাধিকার।
নানান জনের নানান বাণী, তবে নাগরিক হিসেবে নিজ এবং রাষ্ট্র-ক্ষমতা পরিচালনার চাবি কার কাছে হস্তান্তর করবো – এই মর্যাদাপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার চর্চা করতে চাইলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোটদানের বিকল্প কোন পন্থা নেই। বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৫(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠা করা, ৮০ থেকে ৯৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন প্রণয়নের জন্য সুযোগ্য প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করা, ১২১ ও ১২২ অনুযায়ী নিজ ভোটের অধিকার গ্রহণ করে। ২৬ থেকে ৪৭ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত নিজের মৌলিক অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠা করা সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার/আপনার গুরুদায়িত্ব।
গণতন্ত্র চর্চার ব্রহ্মাস্ত্র হলো ভোটাধিকার। আমার সেই একটি ভোট হচ্ছে একটি বালুকণা, এক বিন্দু জল, যা গত দেড় দশকে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও জলবায়ু-সমস্যা সমাধানে বিশ্ব-মানচিত্রের অন্যতম আদর্শ ও অনুকরণীয় রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই আমার আমার সেই একটি ভোট আমার কাছে একটি সোনার বাংলাদেশ গঠনের হাতিয়ার। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজ আঙুলের পিঠে যখন তাকিয়েছি তখন আমি দেখেছি কোটি কোটি ঘরে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ (২০০৬ সালে যা ছিল মাত্র ২৮%), ৫০ লক্ষ গৃহহীন মানুষের জন্য আশ্রয়স্থল, স্বপ্নের পদ্মা সেতু, অনন্য বঙ্গবন্ধু টানেল, নান্দনিক এলেভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সুদীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ, প্রাণবন্ত মেট্রোরেল, বঙ্গোপসাগর বিজয়, সম্ভাবনাময় ব্লু ইকোনমি, বিশ্বনন্দিত মুজিব ক্লাইমেট প্রস্পেরিটি প্ল্যান, অনবদ্য ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-সহ লাখো স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরাসরি অংশগ্রহণের ছাপ। ঢাকা শহরে মেট্রোরেলে যিনি একবার উঠেছেন কিংবা পদ্মাসেতু পেরিয়ে দক্ষিণের কোনো জেলায় গেছেন তিনি অন্তত গত দেড়দশকে তার ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য তৃপ্ত হয়েছেন। এভাবেই উন্নয়নের মহাসড়কে এখন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন প্রায় ৩ হাজার ডলার যেখানে ২০০৬ সালে তা ছিল মাত্র ৫৪৩ মার্কিন ডলার। ২০০৬ সাল থেকে এগিয়ে ২৯ ধাপ এগিয়ে বর্তমান বিশ্বে ৩৫তম অর্থনীতি হলো বাংলাদেশের। ২০০৬ সালে যেখানে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল মাত্র ১৪৬২ টাকা সেখানে ৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে তা ১২,৫০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। দারিদ্রের হার তখনকার তুলনায় কমে অর্ধেকে নেমে এখন ১৮.৭% যা ২০০৬ সালে ছিল ৪১.৫১ শতাংশ। এই বাংলাদেশের চিত্র হলো অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন দর্শনের প্রতিশ্রুতি। একারণেই ঠিক এবারের জাতীয় নির্বাচনেও আমার ভোট আমার কাছে একই রকম উৎসবমুখর, আশা জাগানিয়া। আমার এবারের ভোট স্বপ্ন দেখায় প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশের, জাতির পিতার অসমাপ্ত সোনার বাংলাদেশের, স্বনির্ভর কৃষি, কর্মোপযোগী শিক্ষা ও কোটি যুবকের কর্মসংস্থানের, দ্রব্যমূল্য ও ক্রয়ক্ষমতার সমন্বয়ের, সুলভ স্বাস্থ্যসেবা, সর্বজনীন পেনশন, জবাবদিহি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শিল্পের প্রচারের। আমার এবারের আঙুল ছাপ রেখে যাবে একটি অসাম্প্রদায়িক, সহনশীল ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে লালিত সমাজব্যবস্থা সৃষ্টিতে। স্বপ্নের স্মার্ট সোনার বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৭৮.৫৫ ভাগ মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে (২০০৬ সালে যা ছিল মাত্র ০.২৩%) এবং আইসিটি ফ্রিল্যান্সার সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ (বিশ্বে ২য়) যা বাংলাদেশকে নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছে।
স্ব-ইচ্ছায় স্ব-চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যেই ভোট দ্বারা আমি আমার প্রতিনিধি বাছাই করবো, তার বিজয় শুধু তাঁর একার নয়, গোটা বাংলাদেশের। কেননা নির্বাচিত ও সুযোগ্য জনপ্রতিনিধিদের হাত ধরেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে। তাই আমার ভোট আমার অহংকার। আমার ভোটে গণতন্ত্রের জয়। আর গণতন্ত্রের জয়েই সোনার বাংলাদেশের জয়।
লেখক: প্রক্টর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com