1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:৪৮ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে হরিনাপাটি ও রঙ্গারচর

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

মোহাম্মদ আব্দুল হক
সুনামগঞ্জ জেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের দুটি বহুল পরিচিত গ্রামের একটি হচ্ছে রঙ্গারচর ও আরেকটি হচ্ছে হরিনাপাটি। পাশাপাশি দুটি গ্রামে আছে অনেক মহল্লা এবং হাজার হাজার মানুষের বসবাস। হরিনাপাটি ও রঙ্গারচর দুটি গ্রাম একেবারে সুরমা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে পাশাপাশি আছে। গ্রাম দুটির মানুষ নিবিড় বন্ধনে থাকে মিলেমিশে। কিন্তু গ্রাম দুটির অনেক দুঃখ আছে। দুটি গ্রাম উন্নয়ন বঞ্চিত এবং অন্যতম সমস্যা হচ্ছে নদী ভাঙন। দুই গ্রামের দুটি বাজার। একটি হরিনাপাটি গ্রামের পূর্বে নদী তীরবর্তী হরিনাপাটি বাজার, আরেকটি হচ্ছে রঙ্গারচর গ্রামের দক্ষিণ – পূর্বে অর্থাৎ অগ্নিকোণে নদী তীরবর্তী আদার বাজার। গ্রাম দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার একান্ন বছর ধরে নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল হচ্ছে এবং বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশও হবে। কিন্তু; বাংলাদেশের হরিনাপাটি, রঙ্গারচর ইত্যাদি গ্রাম ও গ্রামের মানুষ সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে।
তুলনামূলকভাবে সুরমা নদীর তীরে আদার বাজার নদী ভাঙনের কবলে কম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যেকোনো সময় ভাঙনের তা-ব শুরু হতে পারে বুঝতে পারা যায়। কারণ, আদার বাজার এলাকার পূর্ব দিকে যেখানে সরকারি খরচে গৃহহীন মানুষের জন্যে লাল রঙের টিনের ঘর করে দেয়া হয়েছে, সেখানে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। কোন বুদ্ধিতে যে ওইখানে সরকারি খরচে গৃহহীন মানুষের জন্যে ঘর করা হয়েছে তা মাথায় আসে না। সঠিক যাচাই বাছাই না-করেই কাজটি করা হয়েছে। জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ না-করলে; নদীর তীরে গড়ে তোলা ওইসব ঘর খুব তাড়াতাড়ি নদীরগর্ভে যাবে। তবে ভয়াবহ অবস্থা হলো হরিনাপাটি গ্রামের।
নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রাম হরিনাপাটি। হরিনাপাটি গ্রামের জমজমাট বড়ো বাজারটি বিলীন হয়েছে বহু বছর আগে। প্রায় ৩৬ বছর আগে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল জিনিসপত্রের রমরমা ব্যবসায়ের একটি কেন্দ্র ছিলো হরিনাপাটি বাজার। তখন সেই বাজারে পাকা দালান ছিলো, ব্যবসায়ী দোকান ছিলো, একটি ধান ও গম ভাঙানোর মিল ছিলো, ‘রাইস মিল’ বলতে তখন আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের কাছে হরিনাপাটি বাজারের ‘রাইস মিল’ ছিলো ভরসা। সপ্তাহে দুই দিন বৃহ¯পতিবার ও রবিবার হাট বসতো। হরেক রকম পণ্য নিয়ে দূরের গ্রামের ব্যবসায়ীরা আসতেন হরিনাপাটি গ্রামের পূর্ব দিকে বয়ে চলা সুরমা গাঙের তীরবর্তী হরিনাপাটি বাজারে। এখন আর সেই বাজার নাই। বারবার ভাঙতে ভাঙতে বাজার বলতে এখন যা আছে সেটিকে আর ‘গ্রাম্য বাজার’ বলতে যা বুঝতে পারা যায় সেরকম বাজার বলে চিনতে পারা যায় না। এখন প্রতি বছর নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে নদী তীর আর স্থানীয় চার পাঁচজন ব্যবসায়ী বারবার পিছিয়ে আসছেন নিজেদের অস্থায়ী দোকান নিয়ে।
হরিনাপাটি গ্রামের বাজারের দুই পাশে জনবসতি গড়ে উঠেছিলো এবং ওই দুই জনবসতিতে প্রায় দুই শতাধিক স্থায়ী আবাস ছিলো প্রায় এক হাজার মানুষের। হরিনাপাটি বাজার নদী ভাঙনে বিলীন হওয়ার সাথে সাথে ভাঙনের থাবায় দুই দিক থেকে দুটি জনবসতিও আর অবশিষ্ট নাই। আহারে! শতোশতো পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে একমাত্র ভিটামাটি হারিয়ে। এদেশে এমনিতেই কতো সরল ও দুর্বল মানুষ দুষ্ট ও লোভী মানুষের নানান রকম অপকর্মের শিকার হয়ে নিজের জায়গা জমি ও পৈতৃক ভিটামাটি থেকে বঞ্চিত হয়। তার উপর চলছে নদী ভাঙনের তা-ব।
নদী প্রাকৃতিক পরিবেশের এক অনন্য জলধারা। এটি মূলত মানুষের ও জীববৈচির্ত্যের সরল-সৌন্দর্যের ও মঙ্গলের নিমিত্তে। কিন্তু; এই নদী যখন মানুষের বিনাশের কারণ হয়ে উঠে, তখন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় মানুষকেই। মানুষের কল্যাণের জন্যে কল্যাণ-রাষ্ট্র কল্যাণ মূলক কাজ করে। এসব কাজের জন্যে স্থানীয় সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করে জনগণ। জনগণ ভোট দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নেতা বানায়। জাতীয় সংসদ সদস্য থেকে কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত হয় রাষ্ট্রের ও জনগণের কল্যাণের জন্যে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে একান্ন বছর আগে। এই একান্ন বছরে নিয়ম করে নির্বাচন হয়েছে এবং সরকার গঠিত হয়েছে এবং প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেটে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন হয়েছে। হরিনাপাটি গ্রামের মানুষও প্রতিবারে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান, এমপি নির্বাচিত করেছে। কিন্তু; হরিনাপাটি গ্রামের মানুষের প্রকৃত অর্থে কোনো উন্নয়ন হয়নি।
হরিনাপাটি গ্রামের ইলাম মহল্লার একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের সময় থেকে আছে। এখানে কোনো উচ্চ বিদ্যালয় গড়ে উঠেনি। হাজার হাজার গ্রামে কমিউনিটি হাসপাতাল হয়েছে, কিন্তু; হরিনাপাটি গ্রামের মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা আজও হয়নি। দেশের হাজার হাজার বিদ্যালয়ে একাদশ – দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠদান চললেও হরিনাপাটি ও রঙ্গারচর গ্রামের একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয়ে এখনও একাদশ – দ্বাদশ শ্রেণি চালু হয়নি। সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হলো হরিনাপাটি গ্রামের মানুষ নিজেদের ভিটামাটি হারিয়ে গৃহহীন মানুষের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। প্রতি বছর শীতের সময় যখন নদীর পানি অনেক নিচে নেমে যায় তখন একবার ভাঙন শুরু হয়, আবার যখন বর্ষাকালে পানিতে নদী ভরপুর হয়ে প্রবলভাবে ¯্রােত চলতে থাকে তখন ভাঙনের মাত্রা তীব্র হয়। এভাবেই বছরের পর বছর ভাঙতে ভাঙতে গৃহহীন হয়েছে হরিনাপাটি গ্রামের হাজার মানুষ। নদী ভাঙনের কবলে হরিনাপাটি বাজার বিলীন হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বহু মানুষের একমাত্র আয়ের উপায় নাই হয়ে গেছে এবং এভাবেই শতাধিক মানুষ একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে।
হরিনাপাটি গ্রামের ভিতর দিয়ে কয়েকটি খাল আছে যা গ্রামের উত্তর ও দক্ষিণের ছোটো ছোটো বিলের সাথে সংযুক্ত। কয়েকটি ছোটো বড়ো পুকুর আছে। এসব খাল ও পুকুরের সাথে যতো দ্রুত সুরমা নদীর ভাঙন এসে মিশবে ততো দ্রুত গ্রামের ভাঙন ত্বরান্বিত হবে। এই ব্যাপারটি গাণিতিক ভাবেই ঘটবে। অবহেলা করে সময় ক্ষেপণ করলে কেউ ভাঙন থেকে বাঁচতে পারবে না। বিষয়টি এ সময়ের জ্ঞান চর্চার সন্তানরা বুঝতে পারছে। তাই স¤প্রতি গ্রামের কয়েকজন লেখাপড়া জানা তরুণের উদ্যোগে এলাকার মুরুব্বিদের নিয়ে গ্রামবাসী নদীর তীরে মানববন্ধন করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এসব খবর মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। পরে কিছু কাজের প্রকাশ দেখা গেলেও তাতে খুব একটা সুফল আসেনি। সঠিক ভাবে জরিপ করে যদি এবছরই পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা বরাদ্দ দিয়ে কাজ শুরু না-করা হয় তাহলে আগামী শীতের আগেই আরও বহু মানুষের একমাত্র সম্বল ঘরখানি নদীর গর্ভে চলে যাবে। নদীগর্ভে বিলীন হবে আদার বাজার থেকে হরিনাপাটি হয়ে বিজিবি মাঠগাঁ ক্যা¤েপ যাওয়ার একমাত্র ভঙ্গুর সড়কটি। এভাবেই প্রতি বছর বহু মানুষ গৃহহীন হতে থাকবে। একসময় ভাঙতে ভাঙতে হারিয়ে যাবে হরিনাপাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শতবর্ষের পুরনো মসজিদ। গ্রামের অস্তিত্ব বিলীন হবে একেবারে।
এখন প্রশ্ন হলো, হরিনাপাটি গ্রামের মানুষের এই দুঃখ দেখে তার সমাধানের জন্যে কি কোনো দায়িত্বশীল সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা বা জনপ্রতিনিধি বা জনগণের সরকার বাংলাদেশে আছে?
[লেখক – মোহাম্মদ আব্দুল হক, কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com