শামস শামীম ::
ভারতের মেঘালয় থেকে সালফারমিশ্রিত কয়লা আমদানির কারণে দূষিত হচ্ছে তাহিরপুরের পাটলাই নদীর পানি। মাত্রাতিরিক্ত সালফারের পাশাপাশি ওই কয়লায় নানা খনিজ পদার্থ থাকায় হাওর-নদী, বিশেষ করে টাঙ্গুয়ার হাওরের জলজ জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। টাঙ্গুয়ার হাওরের আলম ডহরের চিতল মাছের আধার নষ্ট হয়ে ওই মাছই এখন বিলুপ্তির পথে। পাটলাই নদীর তীরবর্তী মানুষজনও এর পানি ব্যবহার করতে পারে না। কয়লা পরিবহনের সময় নদীর পানি কালচে হয়ে যেতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত নব্বইয়ের দশকে তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া এলাকায় শুল্ক স্টেশন স্থাপিত হয়। মূলত পাশের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়ের কয়লা ও চুনাপাথর খনি থেকে এসব আমদানির কারণে ওই স্টেশন চালু হয়। নিয়মিত কয়লা পরিবহনের ফলে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা ওই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়। বদলে যায় এ এলাকার জীবনমান। কিন্তু তখন থেকেই সরাসরি কয়লাখনির নানা ক্ষতিকর পদার্থ এবং পরিবহনের ফলে কয়লার বর্জ্য ওই অঞ্চলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। ২০০৮ সালে কয়লায় অতিরিক্ত সালফারের কারণে বাংলাদেশ সরকার কয়লা আমদানি বন্ধ করে দেয়। এভাবে কয়েকবার বন্ধ করা হয়। তাছাড়া তাহিরপুর সীমান্তের প্রায় ২০টি পাহাড়ি নালা বা ছড়া দিয়েও কয়লার বর্জ্য এসে পাটলাই ও যাদুকাটা নদীতে মিশে পানি দূষিত করছে।
২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি) পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে কয়লা খনন ও পরিবহন বন্ধে মেঘালয়ের প্রতিটি জেলায় এ নির্দেশ জারি করে। ২০১৪ সালের ১৩ মে থেকে কয়লা খনন ও পরিবহনে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। কয়েক মাস আগে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলে ফের কয়লা আমদানি শুরু হয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও মেঘালয়ের খনি মালিকরা গোপনে খনন করে বাংলাদেশে চোরাই পথে কয়লা আমদানি করত। বিভিন্ন সময় বিজিবির অভিযানে সেসব কয়লা জব্দও করা হয়েছে। এভাবে সালফারমিশ্রিত ও নানা খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ কয়লা আমদানির ফলে পাটলাই নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। ওই দূষিত নদীর পানি পাশের টাঙ্গুয়ার হাওরে মিশে জীববৈচিত্র্য নষ্ট করছে। পাশাপাশি বৌলাই, রক্তি ও সুরমা নদীতে মিশেও পানি দূষিত করছে।
এলাকার পরিবেশবাদী নেতা রুহুল আমীন বলেন, বেশির ভাগ সময়ই পাটলাই নদীর পানি কালো থাকে। কয়লা পরিবহনজনিত দূষণের কারণেই এমনটা হচ্ছে। এ নদীর পানিতে শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে চর্মরোগে ভুগছেন। তা ছাড়া স্থানীয় যারা এ পানি দিয়ে বাসন-কোসন ধোয়, তারা পেটের পীড়াসহ নানা রোগে ভুগছে।
জেলা মৎস্য অফিসার শঙ্কর রঞ্জন দাস বলেন, তাহিরপুর সীমান্ত দিয়ে প্রায় দেড় যুগ ধরে কয়লা আমদানি হচ্ছে। তাতে খনিজ বর্জ্য ও সালফার থাকার আশঙ্কা আছে, যা হাওরের মাছ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি।