মো. আমিনুল ইসলাম ::
সিলেটের আতিয়া মহলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক হচ্ছেন না সুনামগঞ্জের অধিকাংশ বাড়িওয়ালা। তারা ভাড়াটিয়াদের তথ্য রাখছেন না। পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিকবার বাড়ির মালিকদেরকে ভাড়াটিয়াদের সার্বিক তথ্য যাচাই-বাছাই করার নির্দেশনা দেয়া হলেও এখনো অধিকাংশ বাড়িওয়ালার জানেন না তাদের ভাড়াটিয়াদের যাবতীয় তথ্য। তারা কেবল ভাড়াটিয়াদের নাম, পেশা, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, আয়ের উৎস ও উপার্জনকারীর সংখ্যা, স্থায়ী ঠিকানার উপর ভিত্তি করেই ভাড়া দিচ্ছেন। তবে অধিকাংশ বাড়িওয়ালারাই এলাকার অন্য কোনো ব্যক্তির পরিচিত বলেই নিজেদের বাসার কক্ষ ভাড়া দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলা শহরের বিপুল সংখ্যক ভাড়াটিয়ার ব্যাপারে তেমন তথ্য জানেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ভাড়াটিয়া পরিবারের সংখ্যা কত সে বিষয়েও তথ্য নেই কোনো দপ্তরে।
সিলেটের শিববাড়ি এলাকায় আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান এবং পরবর্তী ঘটনাগুলোর পর সুনামগঞ্জ জেলার সকল এলাকার বাসা-বাড়িতে ভাড়াটিয়াদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ এবং যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মতপ্রকাশ করেছেন সচেতন নাগরিকরা। তারা বলছেন, দ্রুততম সময়ে জেলার সকল ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই জরুরি।
শহরের বাঁধনপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী বাদল রজক বলেন, ‘বাঁধন পাড়া এলাকায় প্রায় ৩০ভাগেরও বেশি ভাড়াটিয়ারা বসবাস করেন। শহরের বিভিন্ন এলাকায় এভাবেই অনেক ভাড়াটিয়ারা বসবাস করছেন। কিন্তু তাদের ব্যাপারে ভাড়া দেয়ার সময় অনেক বাড়িওয়ালারাই সার্বিক বিষয়ে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না বা অনেকেই কেবল মুখের কথার উপর বিশ্বাস করে ভাড়া দিয়ে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে দেশের যে পরিস্থিতি তাতে আমরা আতঙ্কের মধ্যেই আছি। তাই বাড়িওয়ালাদের উচিত বাসা ভাড়া দেয়ার সময় সার্বিক তথ্য জেনে ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে তারপরে ভাড়া দেয়া।’
শহরের নতুন কোর্ট এলাকার বাসিন্দা হারুন রশিদ বলেন, ‘আমরা ভাড়াটিয়াদের তথ্য নতুন করে যাচাই-বাছাই করেছি। যারা বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন তাদের উচিত ভাড়াটিয়াদের সার্বিক তথ্য জেনে নেয়া। কারণ সিলেটের আতিয়া মহলের মতো যেকোনো এলাকায় জঙ্গিরা ঘাপটি মেরে বসে থাকতে পারে।’
শহরের জামাইপাড়া, বড়পাড়া, হাজীপাড়াসহ বেশকিছু এলাকার বাড়িওয়ালা এবং পশ্চিমবাজার, মধ্যবাজার, নতুনপাড়াসহ আরো কয়েকটি এলাকার ব্যাচেলর হোস্টেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভাড়াটিয়া ও বর্ডারদের সম্পর্কে মৌখিকভাবে জানেন অনেকেই। তবে তাদের ব্যাপারে সার্বিক তথ্য জানেন না কেউই। আর এ ব্যাপারে বাড়িওয়ালাদের অনেকেই কথা বললেও তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তাদের মতে দ্রুতই ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানবেন তারা। আর বিষয়টি এখন তারা গুরুত্ব সহকারেই দেখছেন।
এ ব্যাপারে আইনজীবী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শহরের বাড়ির মালিকদের উচিত যে কোন নতুন ভাড়াটিয়াকে বাসা ভাড়া দেয়ার পূর্বে তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা। কেবল মৌখিক তথ্য নয়, সে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করে বলে পরিচয় দিচ্ছে এ ব্যাপারে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা। জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করা কেবল নতুন ভাড়াটিয়াদের জন্যই নয়, পুরাতন ভাড়াটিয়াদের ব্যাপারেও আরো বিস্তারিত জানার প্রয়োজন রয়েছে। তাছাড়া ভাড়াটিয়াদের প্রতি নজর রাখাও বাড়িওয়ালাদের দায়িত্ব।’
সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র হোসেন আহমদ রাসেল বলেন, ‘সুনামগঞ্জ পৌর এলাকাতেই প্রায় তিন হাজারেরও বেশি পরিবার ভাড়াটিয়া হিসেবে আছেন। আমরা বাড়ির মালিকদেরকে নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করতে যাচ্ছি এবং বহুতল ভবনের বাড়িতে সকল ভাড়াটিয়াদের ছবি সংগ্রহ, ভোটার আইডি সংগ্রহসহ ভবনে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পৌরসভার পক্ষ থেকে এসব তথ্য একটি স্পেশাল টিম যাচাই-বাছাই করে দেখবে।’
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশীদ বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সুনামগঞ্জে নতুন করে ভাড়াটিয়াদের সার্বিক তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। আমরা সকল বাসায় বাসায় ফরম দিয়েছি। সেটা পূরণ করে জমা দেয়া শুরু হয়েছে। আমরা বাসা ভাড়া দেয়ার আগে সার্বিক তথ্য জেনে ভাড়াটিয়াদেরকে কক্ষ ভাড়া দেয়ার জন্য আগে থেকেই নির্দেশনা দিয়েছি।’