২০০৫ সালে সুনামগঞ্জ শহরতলির কুরবাননগর ইউনিয়নের মাইজবাড়ি গ্রামে পাঁচ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাঁস প্রজনন কেন্দ্র। ২০০৭ সালে এর অবকাঠামো কাজ শেষ হওয়ার পর কার্যক্রম শুরু হয় পুরোদমে। এতে ব্যয় হয় পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। হ্যাচারিসহ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পায়। হাঁস প্রজনন কেন্দ্র থেকে হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করে হাঁসের ফার্ম সৃষ্টি হয়। অনেক খামারি হাঁস বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেন। কিন্তু এই প্রকল্পটি চালু হওয়ার ৮ মাস পরই এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বিএনপি সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর, তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এর কার্যক্রম স্থগিত করে দেয় এবং প্রজনন কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
প্রজনন কার্যক্রম ৮ বছর বন্ধ থাকার পর গত ৬ মাস আগে এর কার্যক্রম পুনঃরায় চালু হলেও জনবল সংকটসহ হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনের ইনকোভেটর মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতির ত্রুটির কারণে প্রজনন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্রজনন কেন্দ্রটিতে বর্তমানে এক হাজার হাঁস রয়েছে। এই হাঁস থেকে বছরে ১ লাখ ৮০ হাজার ডিম পাওয়া গেলেও বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় বিভিন্ন খামারিরা ডিম ক্রয় করে পুরাতন পদ্ধতিতে তোষ দিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করছেন। কিন্তু তাতে তারা যেমন বাচ্চা উৎপাদনে অধিক দিন ব্যয় করতে হচ্ছে তেমনি সব ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করা সম্ভব না হওয়ায় লাভজনক অবস্থায় ফিরে যেতে পারছেন না।
এই প্রজনন কেন্দ্র ৭টি শেডে ৪০ হাজার হাঁসের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু হাঁসসংরক্ষণের শেডে মাত্র ৩টিতে হাঁস সংরক্ষণ করা হলেও বাকিগুলো শেড বা ভবন অপরিচ্ছন্ন, জীর্ণশীর্ণসহ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তাছাড়া অব্যবস্থাপনার কারণে কচুরিপানায় ভরে গেছে প্রজনন কেন্দ্রের বিশাল এলাকা। লোকবল সংকটে প্রজনন কেন্দ্রটির কার্যক্রম স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। অযতেœ-অবহেলায় পড়ে থাকা দেশের দ্বিতীয় হাঁস প্রজনন কেন্দ্রটি আজ অস্তিত্ব সংকটে। এ কেন্দ্রটির সার্বিক উন্নয়ন করতে সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। কেন্দ্রটির সার্বিক উন্নয়ন করলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।