কিছু হিজড়াদের কার্যকলাপে সাধারণ জনগণ, দোকানদার, ব্যবসায়ী, মালিকরা ভীষণভাবে বিরক্ত ও উদ্বিগ্ন। তাদের দৌরাত্ম্য যেভাবে বাড়ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে মানুষের বাসা-বাড়িতে চাঁদাবাজির ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিতে পারে। দেশে হিজড়াদের সংখ্যা যেমন দিন দিন বাড়ছে, একই সঙ্গে তাদের উৎপাত ও চাঁদাবাজির বিড়ম্বনাও বেড়ে চলেছে। এক সময় কিছু সংখ্যক এনজিও হিজড়াদের অধিকার নিয়ে কাজ করলেও বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এসব এনজিও কার্যক্রম হিজড়াদের কর্মসংস্থান ও সামাজিকীকরণে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। পত্র-পত্রিকায় প্রায়শ হিজড়াদের তা-ব, চাঁদাবাজিসহ নানাবিধ খবর প্রকাশিত হয়। হাট-বাজার ও রাস্তার দোকানে হিজড়াদের চাঁদাবাজি অতিসাধারণ ঘটনা। দোকানি ও ব্যবসায়ীরা এদের নিয়মিত চাঁদা দিতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। কখনো কখনো হিজড়া গ্রুপগুলোর সীমালঙ্ঘন ও মাত্রাতিরিক্ত চাঁদা দাবির ঘটনায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে থাকে। বিশেষত, কোন বাড়িতে নবজাতকের জন্ম হলে এবং বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠানাদিতে হিজড়াদের হানা দেয়ার ঘটনা সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়।
বছর দশেক আগেও হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজনের এমন দৌরাত্ম্য ছিল না। তখন তাদেরকে বিয়ে, গায়ে হলুদ, সন্তানের নাম রাখা, খৎনানুষ্ঠান এসব অনুষ্ঠানে নাচগান করতে দেখা যেতো। সেখানে যা বখশিস পেতো তাতে তারা মোটামুটি চলতো। বিগত কয়েক বছর ধরে হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজনের দৌরাত্ম্য তথা চাঁদাবাজি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। তাছাড়া চাঁদাবাজির নতুন নতুন ক্ষেত্র অনেকে আবিষ্কার করছে। আগে যেখানে বিনয়ের সুরে চাঁদা চাইতো, এখন জোর করে চাঁদা আদায় করছে।
হিজড়াদের এ ধরনের অপতৎপরতা কঠোর হস্তে দমন করা উচিত। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা দরকার। যতদিন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না হবে ততদিন তাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতি সকলের সহৃদয় ও সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি যেমন আমাদের মানবিক দায়, ঠিক একইভাবে কিছু সংঘবদ্ধ হিজড়াদের অপরাধমূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে সামাজিক ঐক্য ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করা যায় না। প্রকৃত হিজড়াদের চাকুরি ও পুনর্বাসনে সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে নকল, সিন্ডিকেটেড অপরাধী হিজড়াদের দৌরাত্ম্য ও যথেচ্ছ চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।