1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৯:২২ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

গল্প নয় সত্যি, মাত্র কয়েক বছর আগের কথা : ৫৯

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৭

আজকের লেখার বিষয় হল প্রেম! কেউ কেউ মনে করতে পারেন আমার ভীমরতি ধরেছে। আসলে কিন্তু তা নয়, জীবনে অনুরোধে বহু ঢেঁকি গিলেছি। আজ না হয় আমার তরুণ পাঠকদের অনুরোধে জাহাজই গিললাম।
মান্না দে’র গানের একটি কলি- ‘হৃদয় আছে যার সেইতো ভালবাসে, প্রতিটি মানুষেরই জীবনে প্রেম আসে।’ যেহেতু আমার হৃদয় আছে, জীবন আছে সুতরাং আমার জীবনেও প্রেম এসেছিল। তবে প্রচলিত ধারায় বা রূপে নয়, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারায়। বর্তমান যুগে প্রেম করা যতটা সহজ, আমরা যখন স্কুল-কলেজে পড়তাম তখন কিন্তু প্রেম করা এতো সহজ ছিল না। বর্তমানে প্রেম নিবেদনের পন্থা আগের চেয়ে বহুলাংশে সহজ হয়ে উঠেছে। এসএমএস, ভাইবার, ইমো, হোয়াটস অ্যাপ, মোবাইল কল প্রভৃতির মাধ্যমে কোনোমতে মেয়েটির নাম্বার জোগাড় করে দু’লাইন লিখে প্রেম নিবেদন করা হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের কালে একটি মেয়ের স্কুল-কলেজে আসা-যাওয়ার সময় তার একটু হাসি নয়তো দু’টি কথা বলা হলে প্রেমিক প্রবর খুশিতে গদগদ হয়ে চিঠি লেখার প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকতেন। আমার বন্ধু-বান্ধবদের প্রায় সবাই প্রেম নিবেদনে অথবা মেয়ে পটাতে ব্যস্ত থাকতো। আমার আবার ধৈর্য কম, কোনো মেয়ের স্কুল শুরু ও ছুটির সময় প্রতিদিন মেয়েটিকে চেহারা মোবারক দেখাবার জন্য পিছন পিছন হাঁটা আমার সম্ভব হতো না। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ স¤পাদক তালেব উদ্দিন শহীদ হওয়ায় আমি তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ স¤পাদক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করি। সুতরাং প্রেমের দিকে সময় দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনি। তাছাড়া চেহারার হাসি মুখ না থাকায় মেয়েরাও আমাকে তেমন পছন্দ করত না। কিন্তু আমি বলেছি, প্রেম আমার জীবনে এসেছে তবে তা ভিন্নরূপে। যেমন তৎকালীন সময়ে সুন্দর হাতের লেখা আর সুন্দর ভাষায় চিঠি লেখা সবাই পারতোনা। তাই প্রেম নিবেদনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় চিঠি আমাকে দিয়ে লিখিয়ে আমার বন্ধু-বান্ধবরা তাদের প্রিয়তমার হাতে তুলে দিত। কারণ, আমার হাতের লেখা সুন্দর ছিল এবং প্রেম-ভালবাসা সংক্রান্ত কিছু কোটেশন আমার মুখস্ত ছিল। যেমনÑ যাযাবরের দৃষ্টিপাত, শেক্সপিয়ারের কিছু লেখার বঙ্গানুবাদ, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের কবিতার কিছু কিছু অংশ এবং ছন্দ জানা ছিল। সেগুলো রংচঙিয়ে জোড়া-তালি দিয়ে রচনা করতে পারতাম সুন্দর মনকাড়া প্রেমের চিঠি। এ ব্যাপারে আমার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় একচেটিয়া বাজার ছিল আমার। আমি জানতাম, কোন ছেলের কোন মেয়ের সাথে প্রেম-ভালবাসা ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্যের প্রেমপত্র লিখে আমার প্রেমের সাধ মিটতো। নিজের বন্ধু-বান্ধবদের প্রেম নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে তাদের সমস্যার সমাধান করতে করতে আমার প্রেমের তেরোটা সেখানেই বেজে যেতো। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্রনেতা, গম্ভীর মুখ প্রভৃতি কারণে কেউ কোনোদিন আমার দিকে ভালোবাসার চোখে দৃষ্টিপাত করেনি। আর আমিও উপযাচক হয়ে কারো পিছু নেইনি। সেসময় জিঠিগুলোতে যেসমস্ত কোটেশন তুলে ধরতাম তার কয়েয়েকটি আমার এখনো মনে রয়েছে। যেমন, প্রেম সম্বন্ধে দৃষ্টিপাতে যাযাবর বলেছেনÑ প্রেম জীবনকে দেয় ঐশ্বর্য, মৃত্যুকে দেয় মহীমা। কিন্তু প্রবঞ্চিতকে দেয় কি? তাকে দেয় দাহ। যে আগুন আলো দেয় না অথচ দহন করে, সেই দীপ্তিহীন অগ্নির নির্দয় দহনে পলে পলে দগ্ধ হলেন কান্ডজ্ঞানহীন হতভাগ্য।
হে বন্ধু তুমি সুন্দর। তুমি কখনো চিরদিনের জন্য বৃদ্ধ হবে না। প্রথম যেদিন তোমাকে দেখি সেদিন যেমন ছিলে আজও ঠিক তেমনি আছো। কেউ যদি অকারণে আমাকে মন্দ বলে নিন্দা করে তার থেকে প্রকৃতপক্ষে মন্দ হওয়া অনেক ভালো। আমার এইভাবে অকারণে নিদারুণ লোকনিন্দার আঘাতের ভারে বারে বারে কত ভাবে অনেক আনন্দ আমরা হারিয়ে ফেলি। আমার প্রেম ক্লেদহীন, ভীষণ নির্মম, সর্বদাই যা অচঞ্চল তা অবিচল থাকবে। কপোতীর প্রেম যেমন নিষ্কলঙ্ক তেমনি আমার প্রেম, তবুও সে অবিশ্বাসী নয়। আর প্রেমের তুলনা করা যায় ভঙ্গুর কাঁচের সঙ্গে যা সর্বদাই ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। -শেক্সপিয়ার।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com