বিশেষ প্রতিনিধি ::
গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা আ.লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে জেলা আ.লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় আ.লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। কাউন্সিলের পর নেতাকর্মীরা আশা করেছিলেন শীঘ্রই দায়িত্বপ্রাপ্তরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন। কিন্তু সে আশা নিরাশায় পর্যবসিত হয়েছে। দীর্ঘ ১০ মাস কেটে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের খবর নেই। কবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে তাও সুস্পষ্ট করে বলতে পারছেন না জেলা আ.লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তারা বারবারই জানাচ্ছেন ‘শীঘ্রই’ কমিটি গঠন হবে। তবে সে ‘শীঘ্রই’ যে কত দূর তা ধোয়াশার মধ্যেই রয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, জেলা সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনের নাম ঘোষণা পরপরই নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছিলেন। তারা আশা করেছিলেন সুনামগঞ্জে সাংগঠনিক দৈন্যদশা কাটিয়ে উঠবে দলটি। কিন্তু সেসব আশা ভেস্তে যেতে বসেছে। এ জন্য দলীয় নেতাকর্মীরা জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে মতদ্বন্দ্ব, গ্রুপিং, কোন্দলকে দায়ী করেছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, জেলা আ.লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ঘর গোছাতে মনোযোগী হওয়ার কথা থাকলেও তারা নিজেরাই গ্রুপিংয়ে ব্যস্ত। মতদ্বন্দ্ব, কোন্দল আর গ্রুপিংয়ের কারণে দিন দিন নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিভক্তি ছেয়ে গেছে তৃণমূলেও। একে অন্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সভায় বিষোদগারও করছেন নিয়মিত। নাম উল্লেখ না করলেও তারা আকার-ইঙ্গিতে ‘হাটে হাঁড়ি ভাঙছেন’।
দলীয় সূত্র আরো জানায়, আগে গ্রুপিং কোন্দল কিছুটা রাখঢাক দিয়ে চললেও জেলা পরিষদ নির্বাচনে তা প্রকাশ্য রূপ পায়। খোদ জেলা আ.লীগের সভাপতি মতিউর রহমান দল সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ওই নির্বাচনে আ.লীগের সমর্থনবঞ্চিত প্রার্থী নূরুল হুদা মুকুট চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনকে ঘিরে গ্রুপিং আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। জেলা আ.লীগে তৈরি হয় দু’টি বলয়। জেলা আ.লীগ সভাপতি মতিউর রহমান, আ.লীগ জাতীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও পৌর মেয়র আয়ূব বখ্ত জগলুল এবং জেলা আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল হুদা মুকুটের নেতৃত্বে একটি বলয় তৈরি হয়। অপর বলয়ে জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনসহ কয়েকজন এমপি রয়েছেন।
এদিকে, শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ না হওয়ায় জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে বলে রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিবর্গ মন্তব্য করেছেন। ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রের বিজয় দিবস ও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে জেলা আ.লীগের ব্যানারে কোনো কর্মসূচি পালিত হয়নি। তবে ৫ জানুয়ারি পৌর আ.লীগ আয়োজিত শহরের আলফাত স্কয়ারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলা সভাপতি মতিউর রহমান, পৌর মেয়র আয়ূব বখ্ত জগলুল ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল হুদা মুকুট অংশগ্রহণ করেন। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে কোনো কর্মসূচিই হাতে নেয়নি জেলা আ.লীগ। তবে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ছাত্রলীগ আয়োজিত কর্মসূচিতে অংশ নেন জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান ও অ্যাড. শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী এমপি।
এদিকে, জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি থামছে না। একে অন্যের নাম উল্লেখ না করলেও এক নেতা আরেক নেতাকে তীর্যক বাক্যবাণে জর্জরিত করছেন। এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা-রসিকতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ঝড় উঠছে। নেতাদের অনুসারীরাও এক্ষেত্রে কম যান না। তারাও একে অপর গ্রুপের অনুসারীদের নিয়ে সমালোচনায় মজেছেন।
দলীয় অনেক নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ হলে তারা জানান, নেতাদের মধ্যে গ্রুপিংয়ের কারণে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে জেলা আওয়ামী লীগ। এমন অবস্থায় কর্মীদের মনোবলও কমে যাচ্ছে। উজ্জীবিত হওয়ার বদলে কর্মীরা নির্জীব হয়ে পড়ছেন দিন দিন। তারা দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রমের বদলে গ্রুপিংয়ে মনোযোগী হয়ে পড়েছেন। নিজের ঘরই গোছাতে পারছে না দল।
অনেকে জানিয়েছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী সংসদ নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে। সেক্ষেত্রে দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থীও দেখা যেতে পারে। তাই সাধারণ নেতাকর্মীরা মনে করেছেন, যত দ্রুত সম্ভব পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে সাংগঠনিকভাবে সুনামগঞ্জ আ.লীগকে শক্তিশালী করা জরুরি। তা না হলে দিন দিন বিভক্তি বাড়বে।
এ ব্যাপারে জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন বলেন, শীঘ্রই জেলা আ.লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। যোগ্য, ত্যাগী এবং মেধাবীদের মূল্যায়ন করা হবে। যারা প্রকৃত আ.লীগার এবং এতোদিন কোণঠাসা ছিলেন তাদেরকেও মূল্যায়ন করা হবে।