আজ এমন একজন রাজনীতিবিদের জীবনের ঘটনা নিয়ে লিখছি যিনি সহজ-সরল, মার্জিত, শিক্ষিত, দৃঢ়চেতা ও মানবিক গুণাবলিতে ভরপুর একজন মানুষ ছিলেন। তিনি হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সুনামগঞ্জ জেলার কয়েকবারের নির্বাচিত সাধারণ স¤পাদক ও সভাপতি। তিনি জনাব আব্দুর রইছ অ্যাডভোকেট।
১৯৩১ সালে জগ্নাথপুর উপজেলার বনগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বি.এ পাস করে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি এল.এল.বি. ডিগ্রি লাভ করে সুনামগঞ্জ বারে যোগদান করে আইন পেশা শুরু করেন। আইন পেশার সাথে সাথে রাজনীতিতে যোগদান করেন। তিনি গণতন্ত্রী দল ও এন.ডি.এফ.-এর সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন। আয়ূব বিরোধী আন্দোলনে তিনি ছিলেন একজন প্রথম সারির নেতা। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন ও গণপরিষদের সদস্য হন। ’৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন ও সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন।
পাক হায়েনাদের হাত থেকে বাংলাকে রক্ষার সংকল্পে ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সুনামগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধে দক্ষ সংগঠকের দায়িত্ব পালন করে বিজয় নিশ্চিত করেন। ১৯৭৩ সালে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য থাকাকালীন অবস্থায়ও নিয়মিত কোর্টে যেতেন কারণ বর্তমানকালের মতো আগের সাংসদদের মোটা অংকের ভাতা ও সুযোগ – সুবিধা দেওয়া হতো না। সংসদ চলাকালীন কার্যদিবসে মাত্র পঞ্চাশ টাকা সম্মানী ও নামমাত্র মাসিক ভাতা দেওয়া হতো। বর্তমান সাংসদদের মতো শুল্কমুক্ত গাড়ি আনার সুযোগ ছিল না। সরকারের পরিবহন পুল থেকে পুরনো গাড়ি দাম ধরে বরাদ্দ দেওয়া হতো। তিনি একটি গাড়ির জন্য পরিবহন পুলে গেলে গাড়ির দাম আট হাজার টাকা ও মেরামতের জন্য সতের হাজার টাকা মিলিয়ে পঁচিশ হাজার টাকা চাওয়া হয়। গাড়ির দাম শুনে ও ড্রাইভারের বেতনের ভয়ে ওদিকে আর অগ্রসর হননি। তিনি কর্মীদের সুবিধা-অসুবিধার দিকে লক্ষ্য রাখতেন।
১৯৭৫ সালে একবার তাঁর সাথে কোনো এক কাজে ঢাকা গিয়েছিলাম। রাত ৯টার সময় জনাব আব্দুস সামাদ আজাদ সাহেবের বাসা থেকে বের হচ্ছি, হঠাৎ আমার পায়ের স্যান্ডেলটি ছিঁড়ে যায়। মন্ত্রী সাহেবের বাসার সামনের বেড়া থেকে তার সংগ্রহ করে স্যান্ডেলটি ঠিক করার চেষ্টা করছি। তা তিনি দেখে ফেলেন। এখনও মনে আছে, রাত সাড়ে ৯টায় এলিফেন্ট রোডে রিকশায় আমাকে নিয়ে গিয়ে পনেরো টাকা দিয়ে সেদিন একজোড়া নতুন স্যান্ডেল কিনে দেন। এ সমস্ত ছোট ছোট অনেক ঘটনা রয়েছে যা থেকে তার হৃদয়ের আন্তরিকতার ছোঁয়া পাওয়া যায়। অনেক ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীর কলেজের বেতন তিনি নিজ পকেট থেকে দিতেন।