সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
‘পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি দুর্বিষহ করে তুলেছে ক্রেতাদের। সরকারের নানা পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও কমছে না পণ্যটির দাম। জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি দেশ থেকে প্লেনে করে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে, তবুও ক্রেতা নাগালের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ পণ্যটি। এবার পেঁয়াজের ঝাঁজে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির প্রধান নায়ক এবার পেঁয়াজ। সাধারণ, খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূতখাতে মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছেন দেশবাসী। চলতি বছরের নভেম্বর মাসে খাদ্যখাতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ হয়েছে। গত মাসে এখাতে মূল্যস্ফীতির হার ছিলো ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এছাড়া বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থলী, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণ এবং বিবিধ সেবাখাতের মূল্যস্ফীতির হার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। নভেম্বর মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। যা গত মাসে ছিলো ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।’
মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনে কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া মার্চের ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেন।
একই সময়ে খাদ্য বহির্ভূতখাতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ, গত মাসে যা ছিলো ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির সার্বিক বৃদ্ধির জন্য পেঁয়াজকেই দায়ী করেছে বিবিএস।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, পেঁয়াজের কারণেই এবার মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির মূল নায়ক এবার পেঁয়াজ, এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। সামনে কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ উঠলেই মূল্যস্ফীতির হার কমে যাবে।
তথ্যে আরও জানা গেছে, বছরওয়ারি পয়েন্ট টু পয়েন্টের ভিত্তিতে নভেম্বর পেঁয়াজ ছাড়াও ডাল, চিনি, মুড়ি, মাছ, মাংস, ব্রয়লার মুরগি, ফল, তামাক, দুগ্ধজাতীয় পণ্য এবং অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর দাম বেড়েছে। মাসওয়ারি ডিম, শাকসবজি ও মসলা জাতীয় পণ্যের দামও চড়া হয়েছে।
এদিকে গ্রামে নভেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিলো ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশে, (অক্টোবর মাসে ছিল ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ)। আর খাদ্য বহিভূর্ত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ (অক্টোবরে ছিলো ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ)।
সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে শহরেও, ৬ দশমিক ১২ শতাংশ। এর পরিমাণ অক্টোবরে ছিলো ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। শহরে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১১ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিলো ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর খাদ্য বহিভূর্ত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা এর আগের অক্টোবরে ছিলো ৬ দশমিক ০৯ শতাংশ। পেঁয়াজে কারণে শহর ও গ্রামেও মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, নভেম্বরের মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধির বিষয়টি খুবই পরিষ্কার, আমরা গোপন করিনি। একনেক সভায় আমরা মন্তব্য করেছিলাম, মূল্যবৃদ্ধির প্রধান নায়ক হলো পেঁয়াজ। নতুন পেঁয়াজ নামার পরে স্থির হবে, মূল্য কমবে বলে আমার আশা। পাঁচ-সাত বছর ধরে দেখে আসছি, যে মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বাড়ে, ওই মাসে অটো খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমে। আবার যে মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বাড়ে, ওই মাসে খাদ্যে কমে। এটা ঘরে বসে সরেজমিন ধরনের হয়ে গেছে কি না? সরকারের যে লক্ষ্য, সেটা যেন স্থির থাকে, সে অনুযায়ী বিবিএস কাজ করছে কি না?
এক সাংবাদিকের এমন জানতে চাওয়ার জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এটা আপনার ধারণা। এটাকে আমি সম্মান করি, তবে একমত নাও হতে পারি। তাছাড়া আমরা সেক্টর অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি দিচ্ছি না, এটা বাড়ছে, স্বীকার করি।