1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৬:০২ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ডা. প্রিয়াংকা ‘হত্যা’ সীতা বিসর্জন কি চলতেই থাকবে? : মিহির রঞ্জন তালুকদার

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৯

নারী নির্যাতন যে শুধু দারিদ্রতার জন্য হয় সেটা কিন্তু নয়। অনেকেই চরম দারিদ্রতার মাঝেও সুখ খুঁজে নেয়। আবার সুশিক্ষার অভাবেও নারী নির্যাতন হয় (সুশিক্ষা এজন্য বললাম কারণ আজ যার কথা লিখতে চলেছি সেখানে শিক্ষার (পুঁথিগত) কোনো অভাব ছিল না।) আমাদের সমাজে দারিদ্রতা এখন অনেকটা হ্রাস পেয়েছে, কিংবা শিক্ষা-দীক্ষায় অনেকটা এগিয়ে গেছে কিন্তু কুসংস্কার থেকে সমাজ এখনো বের হতে পারছে না। শ্বশুর, শাশুড়ি আর ননদ সবাই মিলে ঘরের বউকে ক্রীতদাসী মনে করবে – সে যেন এক পরম্পরা। আর যদি বউ কোনো চাকরি না করে তাহলেতো আর কথাই নেই।
গত ১২ মে সিলেট নগরীর পশ্চিম পাঠানটুলার পল্লবি ‘সি’ ব্লকের ২৫ নম্বর বাসা থেকে ডা. প্রিয়াংকা তালুকদার শান্তা’র ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। স্বামীর পরিবারের দাবি সে আত্মহত্যা করেছে। আমি যখন লিখাটি লিখছি তখন আর এটাকে আত্মহত্যা বলার সুযোগ নেই। প্রিয়াংকা তালুকদার শান্তাকে নিয়মিত নির্যাতন করতেন তার শ্বশুর ও শাশুড়ি। রোববার (১৯ মে) মহানগর হাকিম আদালত-১ এ রিমান্ড শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আতিকুর রহমান। রিমান্ডে পুলিশের কাছে এমনটি স্বীকার করেছেন তারা। কাজেই এটি একটি নির্মম হত্যাকা-।
মেধাবী শিক্ষার্থীরাই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস ক্যাডার হয়। কাজেই তাদেরকে বুঝানোর প্রয়োজন নেই যে, আত্মহত্যা পাপ নয়, মহাপাপ। বিভিন্ন উৎস থেকে যতটুকু জানতে পারলাম ডা. প্রিয়াংকা তালুকদার সিলেট পার্কভিউ মেডিকেল কলেজের প্রভাষক ছিলেন। তাঁর বাবা হৃষিকেশ তালুকদার সুনামগঞ্জের নতুনপাড়ার বাসিন্দা। প্রিয়াংকার ইচ্ছে ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। এজন্য একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তিও হয়েছিল। আর সে কি-না করবে আত্মহত্যা? তাছাড়া তাঁর তিন বছরের একটি ফুটফুটে ছেলেও রয়েছে, নাম কাব্য। এ অবস্থায় প্রিয়াংকা আত্মহত্যা করতে পারে তা কিছুতেই বিশ্বাস করা যায় না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে মায়ের কোলে ছেলের মায়াময় চাহনির একটি ছবি। যা সবার হৃদয়কে বিমোহিত করছে। ছেলের জন্য মা নিজের জীবন বিসর্জন দিতে পারে, কিন্তু ছেলেকে রেখে মায়ের আত্মহত্যা? এটাতো কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়।
শ্বশুর বাড়িতে ডা. প্রিয়াংকা ছিল অসহায়, নির্যাতিত এক নারী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হৈমন্তী’ ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের নির্যাতিত নারী। গৌরীশঙ্কর বাবুর একমাত্র মেয়ে ছিল হৈমন্তী। সেই দ্বিতীয় সীতা বিসর্জনের কাহিনী ডা. প্রিয়াংকা যেমন জানতো, তেমনি জানতো তার তথাকথিত শিক্ষিত স্বামী দিবাকর দেব কল্লোল, জানতো শ্বশুর-শাশুড়িও। তথাপি আমাকে তৃতীয় সীতা বিসর্জন নিয়েই লিখতে হচ্ছে।
বিভিন্ন জনের মন্তব্য থেকে জানা যায়- ডা. প্রিয়াংকা সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠে বাসার যাবতীয় কাজ, পূজা-অর্চনা শেষে নাস্তা তৈরি করে যেতেন কলেজে। দুপুর ২টায় কলেজ ছুটির পরই তাড়াহুড়া করে আসতেন বাসায়। আবার রান্না করতেন সবার জন্য, ঘর পরিষ্কার করতেন, বাসার সবাইকে খাওয়াতেন, তারপর নিজে খেতেন। এতোকিছুর পরও পান থেকে চুন খসলে চলতো অকথ্য মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। বিকেলবেলা ঘুমানোরও অবকাশ ছিলনা। কারণ তার একটি দুধের বাচ্চা রয়েছে তাকেও সময় দিতে হয়। বাসায় কোনো কাজের মহিলা রাখার প্রয়োজন মনে করতো না স্বামীর পরিবারের লোকজন। ঘটনার আগের রাত ৪টা পর্যন্ত ওই বাসা থেকে কান্নার আওয়াজ শুনেছেন প্রতিবেশীরা। সন্দেহ থাকল না যে তাঁর উপর নির্যাতন হয়েছিল কিনা?
উচ্চবিত্ত, উচ্চশিক্ষিত সমাজে যে নারী নির্যাতনগুলো হয় তা আমাদের চক্ষুর অন্তরালেই থেকে যায়। এর প্রধান কারণ হলো তারা শিক্ষিত, তারা ধৈর্যশীল, তারা ভাঙবে তবু মচকাবে না। তারা কাঁদতে চাইলেও কাঁদতে পারে না। কি জানি পাড়া-প্রতিবেশী শুনে ফেলে? পরিবারের বদনাম হবে। তাই শিক্ষিত মেয়েগুলো নীরবে বয়ে বেড়ায় নির্যাতনের জ্বালা। কেউ কেউ এ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বেছে নেয় আত্মহত্যার মতো পথ। যখন একটি মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, তখন বুঝতে কারো বাকি থাকে না তাঁর ওপর কী ধরনের শারীরিক-মানসিক নির্যাতন হয়েছিল।
ডা. প্রিয়াংকা হত্যায় দোষীদের বিচারের দাবিতে সুনামগঞ্জে মানবন্ধন করেছে বিভিন্ন সংগঠন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ। সিলেটে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের প্রিয়াংকার সহপাঠী, সহকর্মী ও ছাত্র-ছাত্রীরাও বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। আজ ২৪ মে আবারও মানববন্ধনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, সুনামগঞ্জ জেলা শাখা।
আমরাও চাই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। আর যেন সীতা বিসর্জনের কাহিনী শুনতে না হয়। কাব্য’র মতো আর কারো যাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মায়ের হত্যাকারীর বিচার চাইতে না হয়। এমন দৃশ্য আমরা দেখতে চাই না। ঈশ্বর কাব্যকে ভালো রাখুক।
[লেখক : শিক্ষক, বালাগঞ্জ সরকারি কলেজ, সিলেট]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com