1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

শুভ বড়দিন

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮

প্রফেসর ন্যাথানায়েল এডউইন ফেয়ারক্রস
খ্রীষ্টের জন্ম এখন আর ঐতিহাসিক পটভূমিতে লিপিবদ্ধ নয়, যীশুর জন্ম আধ্যাত্মিক। ইশ্বরের পুত্র যখন আমাদের জীবনে বাস্তব হয়ে ওঠেন, প্রতি মুহুর্তে যখন আমরা তাঁর সঙ্গে থাকতে সচেষ্ট হই, তাঁর ভালোবাসা অকাতরে অন্যকে বিলিয়ে দেই,. প্রকৃত পক্ষে তখনই খ্রীষ্ট আমাদের হৃদয়ে জন্মগ্রহন করেন। তাইতো কবিগুরু লিখেছেন,“ আজ তাঁর জন্মদিন এ কথা বলব কি পঞ্জিকার তিথি মিলিয়ে ? অন্তরে যে দিন ধরা পড়ে না সে দিনের উপলব্দি কি কালগণননায়? যেদিন সত্যের নামে ত্যাগ করেছি যেদিন অকৃত্রিম প্রেমে মানুষকে ভাই বলতে পেরেছি সেই দিনই পিতার পুত্র আমাদের জীবনে জম্মগ্রহন করেছেন, সে দিনই বড়দিন- তা যে তারিখেই আসুক।
প্রথম বড়দিন, সেদিন কত বড় বা ছোট ছিল জানিনা। কি বার ছিল তাও জানি না। আর আজ বড়দিন মহানন্দের হলেও সেদিন কিন্তু যোষেফ ও মরিয়মের জন্ম যে সুখের ছিল না তা নিশ্চয় বুঝতে পারি। নাম লেখবার জন্য নাসরৎ থেকে বেথলেহেন ৭০ (সত্তর) মাইল পথ পায়ে হেটে, কখনো বা গাধার পিঠে চড়ে তারা গন্তব্যে পৌছালেন এবং ভাবলেন, এই বুঝি কষ্টের অবসান হল। কিন্তু না, কষ্ট যে মাত্র শুরু তা তারা জানলেন যখন মরিয়মের প্রসব বেদনা শুরু হল। এই যন্ত্রনা বেশী বৃদ্ধি পেল যখন কেউ তাদের একটু জায়গা দিল না থাকার জন্য। কত জায়গাতেই না তারা ঘুরেছেন। পান্থশালার (ষহহ) মালিক এতই ব্যস্ত ছিল যে, দুজন ক্লান্ত শ্রান্ত পথিকের দু:খের কাহিনী শোনার মত ধৈর্য্য তার ছিল না। অবশেষে অসহায় অবস্থায় দীনবেশে গোয়াল ঘরে জন্ম নিলেন ইশ্ব- তনয়, মানবপুত্র, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট,‘ইম্মানুয়েল’ আমাদের সহিত ইশ্বর।
অদৃশ্য ঈশ্বর দৃশ্যমান হয়ে মানবের মাঝে জন্মগ্রহন করেছেন, আমাদের সঙ্গে বাস করেছেন, আমাদের সুখ দু:খের সঙ্গী হয়েছেন। বড়দিন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ইশ্বর আমাদের নিত্যসঙ্গী। আমাদের সুখ-দু:খে, আনন্দ-বেদনায়, উত্থান-পতনে, সংকটে উল্লাসে তিনি আমাদের সাথে আছেন কারণ তিনি ‘ইম্মানুয়েল’। তিনি আমাদের সঙ্গে থেকে ্ আমাদের অণÍরে থেকে সকল অসত্য থেকে সত্যের পথে অমঙ্গল থেকে মঙ্গলের পথে, অন্ধকার থেকে আলোর পথে এবং মৃত্যু থেকে জীবনের পথে পরিচালিত করেন।
বড়দিন বড় হয়েছে সময়ের ভিত্তিতে নয়, কিন্তু বড়দিন বড় হয়েছে ঈশ্বরের মহা দয়া ও দানের মহত্বে। ঈশ্বর ও অনেকের মহাত্যাগের ফসল এই দিন। সর্ব প্রথম যিনি ত্যাগ করলেন, তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং ঈশ্বর।“ কারন ঈশ্বর জগতকে এমন প্রেম করিলেন যে আপনার একজাত পুত্রকে দান করলেন, যেন যে কেহ তাঁহাকে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়” (যোহন ৩:১৬) ঈশ্বর নিজেকে শূন্য করলেন, নেমে এলেন মাটির পৃথিবীতে যেন তিনি আমাদের উঁচু করতে পারেন। এখানে বড়দিনের বিশেষ বার্তা হল: “ সকল বড়ত্ব, অহংবোধ ত্যাগ করে সাধারণের সাথে এক হওয়া নিচে নেমে আসা”।
স্বর্গের ঈশ্বর শিশু বেশে আমাদের সংসারে সমাগত। তাঁর সঙ্গে আমাদের সর্ম্পক কি ? তাঁর আগমন আমাদের হৃদয়ে কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে ?
প্রভু যীশুর এই জগতে আসর মূল লক্ষ্যই ছিল, যে সকল মানুষ পাপের কারাগারে বন্দী, তারা যেন মুক্তি পায়। সেই জন্যই তো তিনি আমাদের মুক্তিদাতা, ত্রাণকর্তা, শান্তিরাজ ও ইম্মানুয়েল আমাদের সহিত ঈশ্বর। তিনি দেখিয়েছেন ভালবাসা, আর প্রতিনিয়ত ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন।
‘বড়’দিন ভালবাসার দিন, অন্যকে নিজের সর্বোচ্চ ভালটুকু দেবার দিন, যেমনটি ঈশ্বর দিয়েছেন। সেদিন জগতের মুক্তিদাতার জন্য স্থান ছিল না, কিন্তু আজকের দিনেও কি তাঁর জন্য স্থান আছে ? যখন আমরা অন্যের প্রয়োজনে সাড়া দিই না, মানুষের কোন উপকারে আসি না, ভাইকে ভাই বলে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারি না, তখন যীশুর নামে করা সকল উৎসব শুধূ লোক দেখানো ছেলে খেলাই হয়। যীশু সেখানে স্থান পান না।
যীশু বিশ্ব মানবের পরিত্রাতা। তিনি কোন প্রাসাদে থাকেন না। তিনি দীন দু:খীর বন্ধু। পৃথিবীতে যারা সর্বহারা, তিনি তাদের পরম আত্মীয়। আজ এই শুভ দিনে যদি আমরা যীশুকে দর্শন করতে চাই, যদি তার সেবা করতে চাই, তবে ঐ দীন দরিদ্র সর্বহারাদের মধ্যেই আমরা তাঁকে খুজে পাব। তাদের সেবা করলে, তাদের মুখে হাসি ফোটালে যীশু পরিতৃপ্ত হন। মাদার টেরেজা বলেছিলেন, “ আমি যখন পরম মমতায় কুষ্ঠ রোগীর সেবা করি, তার ক্ষত মুছিয়ে দেই, ঔষধ লাগিয়ে দেই তখন মনে করি আমি যীশুর সেবা করছি।
সত্যিকারের বড়দিন আমাদের সকলের হৃদয়কে করে তুলুক অনেক বড়, সকল অন্ধকার ঘুচে যাক, অন্তর হোক আলোকিত। সবার মাঝে উদয় হোক অকৃত্রিম ভালোবাসা, উপচে পড়–ক শান্তি ও সমৃদ্ধি।
আজ শুভ বড়দিনে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।
(লেখক: প্রাক্তন অধ্যক্ষ, হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ ও সভাপতি সুনামগঞ্জ প্রেসবিটারিয়ান গীর্জা।)

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com