সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
আগামী বাজেটে সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের ওপর একই পরিমাণ করারোপের ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেছেন, ‘আগামী বাজেটে তামাকজাত পণ্যে মূল্যস্তর (করের ভিন্নতা) প্রথা বাতিল হতে পারে। যদিও এ ব্যাপারে ঘোষণা দেওয়ার সময় আসেনি, তবে আমার ধারণা মূল্যস্তর প্রথা থাকছে না।’
সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাজেট ২০১৬-১৭: কেমন তামাক কর চাই’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। ক্যা¤েপইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের সহযোগিতায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, ইউনাইটেড ফোরাম অ্যাগেইনস্ট টোব্যাকো এবং প্রজ্ঞা সম্মিলিতভাবে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, তামাক পণ্যের ওপর বর্তমান ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ২ শতাংশে উন্নীত করা, তামাক পোড়ানোর চুল্লি প্রতি বার্ষিক পাঁচ হাজার টাকা লাইসেন্স ফি আরোপ এবং সিগারেটের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিলের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর পরিচালনা পর্ষদে সরকারি লোক থাকার বিষয়ে এম এ মান্নান বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে সেখান থেকে সরে আসার চেষ্টা করছি। তবে অনেক ক্ষেত্রে চাইলেও পারছি না, কারণ অনেকটা উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা তাদের শেয়ার পেয়েছি।’
সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রথমে নীতি প্রণয়ন করতে হবে এবং পরে আইন প্রণয়ন করতে হবে। তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর পরিচালনা পর্ষদে সরকারের আমলা ও সচিবদের ১৩ শতাংশ শেয়ার আছে। এক দিকে নীতি প্রণয়ন ও অপর দিকে সরকারের মালিকানা থাকলে হবে না। এখান থেকে বেরিয়ে আসা সরকারের জন্য অ্যাসিড পরীক্ষা। কীভাবে এই কো¤পানি থেকে সরকার মালিকানা গুটিয়ে নিতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে।
বৈঠকে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, তামাকচাষিদের প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও অর্থায়ন দিয়ে তাদের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তামাক কো¤পানিগুলো চাষিদের যেন তামাক চাষে উৎসাহিত করতে না পারে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।
পাওয়ার অ্যান্ড পারটিসিপেটরি রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, তামাক পণ্যে কর বাড়ানো হলে স্বল্প মেয়াদে সরকারের রাজস্ব কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। এসব যুক্তির কোনো ভিত্তি নেই। চাষিদের জীবনমানের উন্নয়ন করতে তাদের বিভিন্ন সহায়তা দিতে হবে।
বৈঠকে মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, এমন বাজেট করতে হবে যাতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা তামাকজাতীয় পণ্য কিনতে না পারে, তামাক পণ্য তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। পাঠ্যসূচিতে তামাকবিরোধী সচেতনতামূলক বিষয় অন্তর্ভুক্তির দাবিও করেন তাঁরা। তামাক চাষ নিরুৎসাহিত ও তামাক রপ্তানি বন্ধ করতে রপ্তানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করারও প্রস্তাব করেন তাঁরা।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক ও প্রজ্ঞার সমন্বয়ক হাসান শাহরিয়ার। বৈঠক সঞ্চালনা করেন এটিএন বাংলার প্রধান প্রতিবেদক এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্সের কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ।
জাতীয় অধ্যাপক আবদুল মালিকের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা-৫ আসনের সাংসদ আবদুল মতিন খসরু, ঝিনাইদহ-৩ আসনের সাংসদ মো. নবী নেওয়াজ, নাটাবের সভাপতি মোজাফফর হোসেন, মানসের সভাপতি অরূপ রতন চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্বস্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য) রোকসানা কাদের প্রমুখ।